ক্যান্সার রোগী ফাহমিদাকে বিয়ে করলেন প্রেমিক হাসান

0 254

প্রেম শ্বাশত, প্রেম অমর। কথায় আছে,স্বর্গ থেকে আসে প্রেম স্বর্গে যায় চলে। প্রেমের কাহিনী আজ নতুন নয়। ইতিহাসের প্রেম কাহিনী চন্তী দাস- রজকিনী, লাইলী- মজনু, শিরি-ফরহাদ, রাধা-কৃষ্ণের অমর প্রেমের কাহিনী জানে না এমন কেউ নেই। ইতিহাসে অমর হয়ে আছে প্রেম। তেমনি ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে চকরিয়ার ফাঁসিয়া খালীর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হকের ছেলে মাহমুদুল হাসান আর চট্রগ্রাম মহানগরীর দক্ষিণ বাকলিয়ার ফাহমিদা কামাল।

গত বুধবার (৯ মার্চ) রাতে বাদ-এশা মেডিক্যাল সেন্টারে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। এ বিয়ের মাধ্যমে আরেক ভালোবাসার অমর উপাখ্যান রচনা করলো হাসান ও ফাহমিদা।

চকরিয়ার ছেলে মাহমুদুল হাসান নর্থ সাউথ থেকে এমবিএ আর চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ বাকলিয়াতে জন্ম নেয়া ফাহমিদা কামাল ইইউবি থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেছে।

শিক্ষাজীবনে তাদের দুজনের পরিচয়। লাবণ্যময়ী স্মার্ট সুন্দরী তরুণী ফাহমিদাকে ভালো লাগতে শুরু করে হাসানের। এর পর আস্তে আস্তে দুজন প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। ভালোবাসার মায়াবী বন্ধনে হয়ে উঠে দুজন দুজনার। হাতে হাত ধরে স্বপ্নে বিভোর রঙিন ভুবনে উড়তে থাকে অচেনা হাজারো পথে। সুখ আনন্দ সবই যেন ভরপুর। বিয়ে সংসার কত না মধুর সুখ চোখের কোনায়।

কিন্তু একি! এমন স্বপ্ন সুখের রঙিন উঠোনে ঘনকালো অন্ধকার। সফেদ আকাশ মেঘে ঢাকা বৈরী ঝড়ো হাওয়া সব তছনছ করে দিয়ে ফাহমিদার স্বপ্নরাঙা মায়াবী শরীরে বাসা বাঁধে মরণঘাতী ক্যান্সার। ধরা পরার পর সাথে সাথে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা এভারকেয়ার, পরবর্তীতে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে নেয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ একবছর চিকিৎসার পর ডাক্তাররা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, ফাহমিদার চিকিৎসা আর সম্ভব নয়, ইঙ্গিত দেয়,ফাহমিদার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আর নেই।

পাথর চাপা কষ্ট নিয়ে পরিবারের লোকজন ২০ বছর বয়সী ফাহমিদাকে চট্টগ্রামে নিয়ে এসে মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করায়। সেখানে চলতে থাকে চিকিৎসা। কিন্তু ক্রমাগত ফাহমিদার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে।

প্রেয়সী ফাহমিদার অসহ্য কষ্ট ও বুকভাঙা যন্ত্রণা প্রেমিক হাসানের সহ্য হয় না। ফাহমিদার কষ্ট হাসান ভাগ করে নিতে চায়। চোখের জল মুছে দিতে চায়, কপালে হাত রেখে বলতে চায়, আমি আগের মতো এখনো তোমার পাশে আছি। আমি তোমার চোখে দেখতে পাই সমগ্র বিশ্ব। হাতে হাত রেখে বলতে চায়, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি আমার শুধু আমার। তুমিই আমার জীবন তুমিই আমার সব। মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়াতে চায়। বুকে জড়িয়ে নিয়ে কষ্টগুলো নিজের করে নিতে চায়। কিন্তু তা কী করে সম্ভব! হাসান ফাহমিদার প্রেমিক হলেও সমাজের চোখে পরপুরুষ। মৃত্যুযন্ত্রণায় ফাহমিদা নিঃশেষ হতে চলেছে।সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে হাসান কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। ফাহমিদাকে যদি মরতে হয়, তাহলে তার বুকে মাথা রেখেই মরতে হবে। নিজের পরিবারকে নিয়ে এসে প্রস্তাব দিলো সে, ফাহমিদাকে বিয়ে করতে চাই। মৃত্যু পথযাত্রী ফাহমিদাকে হাসানের বিয়ে করার প্রস্তাবে সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়। হাসানকে বুঝানোর সব ধরনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু হাসান তার সিদ্ধান্তে অটল। ভালবাসার মানুষকে সে পেতে চায়, একান্তভাবে। যদিও বা হয় সে ক্ষণিক।

অবশেষে উভয় পরিবার সম্মত হয়। বিষয়টি জানানো হয় জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা ফাহমিদাকে। অবিশ্বাস্য প্রস্তাব শুনে অপলক তাকিয়ে থাকে সে প্রিয় হাসানের দিকে। ফাহমিদার মুখে ফুটে উঠে নির্মল স্বর্গীয় হাসি। আনন্দ অশ্রুতে দুজনের পৃথিবী দোল খেতে থাকে। বাতাসে নাচতে থাকে রঙিন প্রজাপতি। ইচ্ছে জাগে দুজনের মধ্যে আরো কিছুকাল, কিছু সময় বেচেঁ থাকতে। কিন্তু নিষ্ঠুর প্রকৃতি মুখ ফিরিয়ে নিল। সে রঙ্গিন স্বপ্ন আর চিরজীবী হয়ে উঠতে পারবে না। যদি থাকে পরজন্ম: হাসান- ফাহমিদা গড়ে তুলবে স্বপ্নের তাজমহল।

অবশেষে বিয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়। গত ৯ মার্চ ২০২২ তারিখ বাদ-এশা মেডিকেল সেন্টারে তাদের বিয়ের আয়োজন হয়। কনে ফাহমিদাকে পরানো হয় লাল বেনারসি শাড়ি, গলায় সোনার হার। বর হাসান পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে। আক্দ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। দুজন মিলে কেক কাটে, মালা বদল হয়। খেজুর মিষ্টি খাওয়ানো হয়।

ক্ষণিকের জন্য মরণঘাতী ক্যান্সারকে জয় করে ফাহমিদা হয়ে উঠে অন্য এক পৃথিবীর বাসিন্দা। সমস্ত স্বর্গীয় সুখ তাকে ঘিরে রাখে। হারিয়ে যাওয়া সোনালি দিনগুলো আবার যেন ফিরে পায়। আনন্দে আত্মহারা ফাহমিদার আরো বাঁচতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে হাসানের বুকে মাথা রেখে হাজার বছর বাঁচতে।

হাসান আর ফাহমিদার এই অমর প্রেমকাব্যে প্রেমেরই জয় হলো। জীবন ক্ষনিকের, জীবনের কাছে প্রেম অবিনশ্বর। প্রেমের কাছে হিংস্রতা হার মানে,হার মানে নিষ্ঠুরতা। প্রেম আছে বলেই মানুষগুলো বিশ্বকে দেখে অবাক নয়নে। মানুষ খুঁজে পায় স্বস্তি, একটু শান্তির পরশ,খুঁজে পায় মাথা গোজার ঠাঁই।তাই প্রেম-ভালবাসার ইতিহাস নিয়ে লেখা কবির কবিতা,ঔপন্যাসিকের লেখা উপন্যাস,প্রাবন্ধিকের লেখা প্রবন্ধ চির অমর।

Leave A Reply

Your email address will not be published.