বিশ্ব রাজনীতিতে আবারো আলোচনায় সানা মারিন
ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান চালানোর জন্য রাশিয়া সবচেয়ে বেশি দুষেছে আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোকে। এই জোট তার ঢালপালা মেলতে মেলতে একদম রাশিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত করার জন্য ইউক্রেনকে সদস্য করতে চাইছিলো।
আর এই বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি ক্রেমলিন। যার ফলশ্রুতিতেই ইউক্রেনে সামরিক হামলা। কিন্তু ইউরোপে ন্যাটোর বিস্তার ঠেকাতে পারছে না রাশিয়া। উল্টো এতোদিন নিরপেক্ষ থাকা দুই দেশ ফিনল্যান্ড ও সুইডেন এরিমধ্যে ন্যাটোর সদস্য হতে আবেদন জানিয়েছে।
আর এসবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে নাম আলোচিত হচ্ছে, তিনি হলেন ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি দেশটির সরকার প্রধান হয়েছেন। শুধু তাই নয় তিনিই বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়সে প্রধানমন্ত্রী হবার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।
গোটা ইউরোপে যখন করোনা ভাইরাস রীতিমতো ত্রাস সৃষ্টি করেছিলো, তখন ফিনল্যান্ডের পরিস্থিতি কঠোরভাবে সামাল দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন সানা মারিন। ধারণা করা হচ্ছে এবার ন্যাটোতে যোগ দেয়ার পরবর্তী সময়ও তিনি কঠোরভাবেই সামলাতে পারবেন।
রাশিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্ব নিয়ে টানাপড়েনের জন্য অনেক দিন থেকে তিনি বিশ্ব রাজনীতিতে আলোচিত ব্যক্তি। ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দেয়ার রাশিয়া এরিমধ্যে হুমকি দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত যদি রাশিয়া হামলা চালায় তাহলে সুইডেনের পাশে পাবেন সানা মারিন।
তার রাজনীতিবিদ হয়ে উঠার গল্পটা খুব সোজা ছিলো না। বাবা ছিলেন পানাহারে আসক্ত। এ কারণে মায়ের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। সেই বিচ্ছেদের পর দারুণ অর্থ কষ্টে পরে পরিবার। পরে মারিনের মা এক নারীর সঙ্গে বসবাস শুরু করেন।
নারী পরিবেষ্টিত পরিবারে বড় হলেও অর্থ কষ্ট পেছন ছাড়েনি মারিনের। তাঁকে খুব ছোট বয়স থেকে টাকা রোজগারের জন্য বেরিয়ে পড়তে হয়। এক বেকারিতে কাজ নেন তিনি। এ ছাড়া আংশিক সময়ের জন্য সংবাদপত্রও বিক্রি করতেন।
পড়াশুনায় খুব মেধাবী ছিলেন না সানা মারিন। দক্ষিণ ফিনল্যান্ডের উপকণ্ঠে একটি ছোট্ট শহরের স্কুলে পড়তেন। সেই স্কুলের এক শিক্ষিকের মতে, সানা গড়পড়তা ছাত্রীদের মতোই ছিলেন। উন্নতির জন্য তাঁকে মাঝে মধ্যে বাড়ির কাজ দেয়া হতো।
২০০৪ সালে ১৯ বছর বয়সে তিনি স্নাতক হন। অতঃপর, ট্যাম্পারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান সানা। পড়াশুনা করেন প্রশাসনিক বিজ্ঞানে। সেখানে পরিচয় হয় পেশাদার ফুটবলার মার্কাস রাইকোনেনের। তারপর প্রেম। ১৬ বছর প্রেম করার পর ২০২০ সালে বিয়ে।
পড়াশুনার সময়ই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন মারিন। তিনি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দলে যোগ দেন এবং ২০০৬ সালে সদস্যপদ লাভ করেন। চার বছরের মধ্যে তিনি দলটির সহ-সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হন। ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদে থাকেন।
২২ বছর বয়সে মারিন ট্যাম্পারে সিটি কাউন্সিলের নির্বাচনে লড়ে হেরে যান। পরের নির্বাচনেই তিনি জয়ী হন এবং কাউন্সিল চেয়ারম্যান পদে উন্নীত হন। ওই পদে তিনি চার বছর ছিলেন। এর মধ্যেই ২০১৫ সালে তিনি ফিনল্যান্ডের পার্লামেন্টের সদস্য হন।
২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার জিতে তিনি পরিবহণ ও যোগাযোগমন্ত্রী হন। এরপর ৩৫ বছর বয়সে তিনি পাঁচ জোটের নেতা হিসাবে ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হন। যা বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে একটি বিরল রেকর্ড। তার মন্ত্রিসভায় নারী সদস্যের সংখ্যাও অনেক।
সামাজিক মাধ্যম প্রজন্মের মানুষ সানা মারিন। ইনস্টাগ্রাম থেকে শুরু করে টুইটারে আপডেট দিয়ে থাকেন। খবরের পাশাপাশি নিজের সামাজিক জীবনও ভাগাভাগি করছে পছন্দ করেন। নিজের সন্তানকে স্তন্যদানের ছবি পোস্ট করেও আলোচনায় এসেছিলেন তিনি।