কমছে পেঁয়াজের ঝাঁজ, খুশি নিম্ন আয়ের মানুষ

0 300

অনলাইন ডেস্ক:

কুরবানীর ঈদকে ঘিরে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি বাড়ায় দেশের বাজারের চাহিদার তুলনায় পণ্যটির সরবরাহ বেড়েছে। এতে করে মাত্র একদিনের ব্যবধানে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা করে কমেছে। খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ১০টাকা করে কমেছে পেঁয়াজের দাম। দাম কমায় খুশি পাইকারসহ নিম্ন আয়ের মানুষজন।

হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, আমদানির অনুমতি দেয়ায় বন্দর দিয়ে ইন্দোর ও নাসিক জাতের পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে পূর্বের তুলনায় পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ বাড়ায় দাম কমতির দিকে রয়েছে। বর্তমানে বন্দরে ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ পাইকারিতে (ট্রাকসেল) ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কিছু নিম্ন মানের পেঁয়াজ ২৬ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়েছে। এসব পেঁয়াজ একদিন আগেও ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।

এছাড়া নাসিক জাতের পেঁয়াজ ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে বাজারের সব দোকানেই ভারতীয় পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ লক্ষ্য করা গেছে। সেই সঙ্গে সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতির দিকে রয়েছে। একদিন পূর্বে খুচরাতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

হিলি বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবপণ্যের দাম যখন উর্দ্ধমুখী তখন কিছুটা স্বস্তি মিলেছে পেঁয়াজের দাম নিয়ে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ার পর থেকেই পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। গতকাল যে পেঁয়াজ আমরা বাজার থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে কিনেছি সেই পেঁয়াজ আজ ১০ টাকা কমে ৩০ টাকা কেজি দরে কিনতে পারছি। দাম কমার ফলে আমাদের মত নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য খুব সুবিধা হয়েছে।

হিলি বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা শাকিল খান বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের কারণে দেশের বাজারে একমাত্র দেশিয় পেঁয়াজ দিয়েই চাহিদা মিটছিল। কিন্তু সেই দেশিয় পেঁয়াজের সরবরাহ কমায় ও মোকামের কিছু ব্যবসায়ীর বাড়তি মুনাফার চেষ্টায় পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। ২৫ থেকে ৩০ টাকার পেঁয়াজ বাড়তে বাড়তে ৯০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছিল। কিন্তু ভারত থেকে যেই পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে সেই পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে।

বর্তমানে বন্দর দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। এতে করে বাজারে পেঁয়াজের যথেষ্ট পরিমাণে সরবরাহ রয়েছে। আমরা স্থানীয় আমদানিকারকদের নিকট থেকে পেঁয়াজ ক্রয় করে এনে বাজারে বিক্রি করছি। আমদানি বাড়ার কারণে পেঁয়াজের দাম কমতির দিকে রয়েছে আমরাও কম দামে কিনতে পারছি তেমনি কম দামে বিক্রি করছি। এছাড়া পেঁয়াজের দাম কমার কারণে বাজারে পেঁয়াজের বেচাকেনাও বেড়ে গেছে। আগে কম কিনলেও বর্তমানে সবাই তাদের চাহিদামত পেঁয়াজ ক্রয় করছেন। বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজ খুচরাতে ৩০ টাকা বিক্রি করছি যা আগে ৪০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। তবে কিছু ছাল উঠানো পেঁয়াজ ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। দাম বাড়তি থাকায় ক্রেতারাও চাইছে না যার কারণে বাজারে কেউ আর দেশিয় পেঁয়াজ তুলছে না।

হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, সরকার নতুন করে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়ায় গত ৫ জুন থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। এরপর থেকেই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে তবে দিন দিন বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। পেঁয়াজ যেহেতু কাঁচাপণ্য গরমে অতিদ্রুত এটি পচে নষ্ট হয়ে যায় তাই কাস্টমসের প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত যেন বন্দর থেকে পেঁয়াজগুলো খালাস করে নিতে পারেন সেজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে রেখেছে। বন্দর দিয়ে গত ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ৯ কর্মদিবসে ২৬৮টি ট্রাকে ৭ হাজার ৪২৫ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের উপকমিশনার বায়জিদ হোসেন বলেন, বন্দর দিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় সরকারের রাজস্ব আহরণ কমে গিয়েছিল। বর্তমানে আবারো বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ায় বন্দর থেকে রাজস্ব আহরণ বাড়বে বলে জানিয়েছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, দেশিয় কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমুল্য নিশ্চিতে গত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এতে করে ১৬ মার্চ থেকে হিলি স্থলবন্দরসহ দেশের সবগুলো স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে দাম নিয়ন্ত্রণে গত ৫ জুন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিলে সেদিন থেকেই বন্দর দিয়ে আবারো পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.