বড় ছেলে
অনেকবছর পর কয়েকদিন আগে গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারিদিকে স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশ যত্র-তত্র থু থু আর মল-মূত্রের উৎকট দুর্গন্ধে গা যেন ঘিন ঘিন করছিলো। নিজের কাছে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে আমি চট্টগ্রাম জেলার বিখ্যাত মূল চিকিৎসা কেন্দ্রে আছি। যাক ,সময় কাটানোর জন্য পত্রিকা হাতে নিতে গিয়ে পরিচয় হলো সজীবের সাথে, নির্লিপ্ত হাসি নিয়ে কথা বলে ছেলেটা চেহারার মধ্যে ও কেমন যেন আলোর ঝিলিক ওর সাথে কথা বলতে গিয়ে আমার মনটা ও যেন কিছুক্ষনের মধ্যে সজীব হয়ে গেল।
সজীব চট্টগ্রাম শহরের ছিন্নমূল শিশু অতি দরিদ্র পরিবারের বড় ছেলে। পত্রিকার হকার করে বেডায় হাসপাতাল চত্বরে। আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও বিভিন্ন আড্ডায় “বড় ছেলে ” নাটক নিয়ে বেশ সরগরম। যদি ও আমার সে নাটক দেখার সৌভাগ্য এখনো হয়নি।
বড় ছেলে হিসাবে দায়িত্বের মর্মবেদনা আমি বুঝি। কারণ আমি ও আমার পরিবারের বড় ছেলে। সংসার ধর্ম বুঝে ওঠার আগে নাটকের বড় ছেলের চেয়ে বাস্তবের সজীবের কাঁধের বোঝা অনেক ভারী। তাই তাকে সকালের স্কুল বাদ দিয়ে বিকালের শিফ্ট বেচে নিতে হয়েছে অন্যান্য কর্মজীবি শিশুদের মতো। একদিকে পরিবারের বড় ছেলের গুরু দায়িত্ব ও অন্য দিকে নিজেকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার অক্লান্ত প্রেরণাশক্তি দেখে অভিভূত হলাম । আমার জীবনিশক্তি আরো ও বেড়ে গেল। পরিচয় পর্ব শেষে আমি ছবি তুলে কিছু বখশিস দিতে গিয়ে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ মিষ্টি হাসি দিল। পরে অন্য দিকে পত্রিকার গ্রাহকের খোঁজে দ্রুত চলে গেল।
মনে মনে আশীর্বাদ করলাম ।
– Salim Ahmed