বাসার্কে উড়িয়ে দিয়ে সেমিতে রোমা
অবিশ্বাস্য! অসাধারণ! অকল্পনীয়! এই তিনটি শব্দ দিয়েও বোধহয় রোমার কীর্তিকে বলে বোঝানো সম্ভব নয়। শক্তিশালী বার্সেলোনার বিপক্ষে শুধু জিতলেই হতো না, মেলাতে হতো কঠিন সমীকরণ। পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলে সেই অসাধ্যই সাধন করলো রোমা। গড়লো ইতিহাস। মৌসুমজুড়ে দারুণ ছন্দে থাকা ভালভেরদের দলকে ছিটকে দিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠে গেল ইতালিয়ান ক্লাবটি।
প্রথমবারের মতো প্রথম লেগে তিন গোলের ব্যবধানে হারের ধাক্কা কাটিয়ে প্রতিযোগিতার শেষ চারে ওঠার কীর্তি গড়লো রোমা। একই সঙ্গে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠলো ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনাল খেলা দলটি।
প্রথম লেগে বার্সার মাঠ ন্যু ক্যাম্পে ৪-১ গোলে হারার পর কেউ আশা করেনি এই ক্লাবটিকে নিয়ে। কিন্তু প্রত্যাবর্তনের ইতালিয় রূপকথা লিখেই সেমিফাইনালে উঠেছে রোমা। দলটিকে তুলনা করা যেতে পারে ডেভিডের সাথে, কিংবা রোমান কলিসিয়ামের গ্ল্যাডিয়েটরদের সাথে। তবে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৪ গোলের সমতা, একটি অ্যাওয়ে গোলের কারণে সেমিফাইনালে চলে যাওয়া ফুটবল দেবতার ছোঁয়া না থাকলে সম্ভব না। সাথে প্রশংসা পায় ডানিয়েল ডি রসির মতো বুড়ো গ্রেটদের সাহসিকতাও।
এই ম্যাচে বল দখলের লড়াইয়ে কিছুটা পিছিয়ে ছিল রোমা। কিন্তু বাকি সব দিকেই ছিল এগিয়ে। বার্সার গোলমুখে মোট ১৬টি শট নিয়েছে রোমা, যার ৬টি লক্ষ্যে। আর বার্সা মোট শট নিয়েছে ৮টি, যার মধ্যে লক্ষ্যে ছিল মাত্র ২টি।
স্ট্যাডিও অলিম্পিকোর মাঠে রোমা-বার্সেলোনার ম্যাচে শুরু থেকেই বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকে বার্সেলোনা। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে মেসির শট গোলপোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়। এরপর আবারও মেসি-সুয়ারেজের সমন্বয়ে ভালো আক্রমণ তৈরি করে বার্সা। কিন্তু পরক্ষণেই বার্সার দুর্বল রক্ষণের সুযোগ নিয়ে পাল্টা-আক্রমণ থেকে গোল খেয়ে বসে স্প্যানিশ জায়ান্টরা। ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে ডেনিয়েল রোসির লম্বা ক্রস থেকে বল পেয়ে যান রোমার জেকো। বার্সার জালে বল জড়াতে জোকোর কোনো সমস্যা হয়নি (১-০)।
চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনার বিপক্ষে এ নিয়ে শেষ তিন ম্যাচে তিন গোল করেন জেকো। ম্যাচের শুরুতেই গোল হজমের ধকল সামলাতে বার্সাকে বেশ সময় নিতে হয়েছে। অন্যদিকে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে রোমা অনেকটা উজ্জীবিত হয়ে খেলে। বেশ কয়েকটা ভালো সুযোগও তৈরি করে তারা।
২১তম মিনিটে ফ্লোরিনজার ক্রস হেডে ক্লিয়ার করেন বার্সা খেলোয়াড় উমতিতি। ২৬তম মিনিটে জেকোর পাস কার্লোভের কাছে পৌঁছানোর আগে ক্লিয়ার করেন বার্সার রক্ষণে থাকা জেরার্ড পিকে। ম্যাচের ২৯তম মিনিটে বেশ ভালো সুযোগ পায় রোমা। ফ্যাজিওর দুর্দান্ত ক্রস থেকে প্যাটট্রক শিক ঠিকঠাক মাথা ছোঁয়াতে পারলেই রোমা ২-০তে এগিয়ে যেত। কিন্তু সেটা হয়নি। তার হেড ঠিকানা খুঁজে না পেলে ১-০তেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় স্বাগতিকদের। ৩২তম মিনিটে আবারও ভালো সুযোগ পায় রোমা। এবার পিকের স্লাইডিং ট্যাকলে রক্ষা পায় কাতালানরা।
৩৭তম মিনিটে আর্জেন্টাইন তারকা ফ্লোরেনজির ক্রস থেকে দ্বিতীয় গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন জেকো। পরের মিনিটে পাল্টা আক্রমণে উঠে আসে বার্সেলোনা। লুইস সুয়ারেজকে ফাউল করলে ফ্রি-কিক পায় বার্সেলোনা। কিন্তু ২৫ গজ দূর থেকে নেয়া মেসির শট বারের ওপর দিয়ে চলে গেলে সমতায় ফিরতে ব্যর্থ হয় ভালভার্দের শিষ্যরা। এরপর আর গোল পায়নি কোনো দল। প্রথমার্ধে বারবার ভেঙে পড়ছিল বার্সার রক্ষণভাগ। মেসিও নিজের ছায়া হয়েই ঘুরছিলেন। অন্যদিকে সুযোগ পেয়েও গোলসংখ্যা বাড়াতে পারেনি রোমা।
দ্বিতীয়ার্ধে সেই পুরোনো আক্রমণাত্মক রূপেই দেখা যায় রোমাকে। আর বার্সার খেলায় পাওয়া যায় না কোন আত্মবিশ্বাসের ছাপ। ৫৭ মিনিটের মাথায় ডি বক্সের ভেতরে জেকোকে হাত ধরে টেনে ফেলে দেন বার্সার ডিফেন্ডার পিকে। পিকেকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। দেন বার্সার বিপক্ষে পেনাল্টির নির্দেশ। সেখান থেকে গোল করেন ডি রসি। দলকে ২-০ গোলে এগিয়ে দেন।
এরপর ম্যাচের ৮২ মিনিটে বার্সার কফিনে শেষ পেরেকটা ঠোকেন গ্রিক ডিফেন্ডার কস্তাস মানোলাস। কর্ণারে দারুণ এক হেড থেকে গোল করেন তিনি। এই তিন গোলের সাথে একটি মহামূল্যবান অ্যাওয়ে গোল, দুই লেগ মিলে ৪-৪ গোলের সমতা থাকলেও অ্যাওয়ে গোলের হিসেবে সেমিতে যাচ্ছে রোমাই।
ম্যাচের শেষ অংশে বার্সা ফেরার মরিয়া চেষ্টা করলেও তাতে গোল আসেনি। ফলে এবারও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে তাদের। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায়। অন্যদিকে প্রত্যাবর্তনের উদাহরণ হিসেবে রোমার এই পারফরম্যান্স মানুষ মনে রাখবে।