বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। শনিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাঁর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে কারা সূত্র।
এর আগে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনি এখনো পালিয়ে আছেন। তাঁদের মধ্যে এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী কানাডায় ও এ এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। অন্য তিনজন খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ও মোসলেম উদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই। এ ছাড়া ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আরেক আসামি আজিজ পাশা ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান।
মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা নিয়ে শনিবার কারাগারের চারপাশে বিকেল থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পুলিশের তিন স্তরের নিরাপত্তাবেষ্টনী চারদিক থেকে কারাগার ঘেরাও করে রাখে। ফাঁসি কার্যকরের খবর শুনে সাংবাদিকেরাও কারাফটকের দিকে যেতে শুরু করেন।
কারা সূত্র জানায়, ফাঁসি কার্যকর করতে রাত ১২টা ১ মিনিট নির্ধারণ করা হয়। নিয়ম অনুসারে এর আগে শুক্রবার আবদুল মাজেদের পরিবার তাঁর সঙ্গে দেখা করে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদকে সোমবার গভীর রাতে রাজধানীর গাবতলী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বুধবার ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এম হেলাল চৌধুরী আবদুল মাজেদের মৃত্যুপরোয়ানা জারির আদেশ দেন। সেদিনই তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার জন্য আবেদন করেন। রাষ্ট্রপতি সে আবেদন নাকচ করে দিলে তাঁর ফাঁসির রায় কার্যকরের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়।
তবে এত দিন মাজেদ কোথায় ছিলেন, তা নিয়ে নানা কথা শোনা যায়। গ্রেপ্তারের পর মাজেদ সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হেমায়েত উদ্দিনকে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২২ থেকে ২৩ বছর ধরে তিনি কলকাতায় ছিলেন। সেখান থেকে চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপর তিনি ঢাকাতেই ছিলেন। তবে অন্য একটি সূত্র জানায়, কিছুদিন আগে ভারত সরকার মাজেদকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়। এরপর বিশেষ ব্যবস্থায় তাঁকে দেশে আনা হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার পর অন্য সব খুনির সঙ্গে আবদুল মাজেদ প্রথমে লিবিয়ায় চলে যান। এরপর তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান তাঁকে সেনেগাল দূতাবাসে চাকরি দেন। ১৯৮০ সালে দেশে ফিরে আসার পর তিনি বিআইডব্লিউটিসিতে যোগ দেন। সে সময় উপসচিব পদমর্যাদায় তিনি চাকরি করেন। পরে তিনি যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ে পরিচালক পদে যোগ দেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার শুরু হয়। সে সময় আত্মগোপনে চলে যান মাজেদ। তাঁর স্ত্রী ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট আবাসিক এলাকায় বসবাস করছেন। মাজেদের চার মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তাঁর গ্রামের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিনে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বাতিল হলে ওই বছরের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন।
১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকার দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় দেন। নিম্ন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণের শুনানি শেষে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট দ্বিধাবিভক্ত রায় দেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চ ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।