যেভাবে গ্রেফতার হলেন রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহেদ
বহুল আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতাল প্রতারণা মামলার প্রধান পলাতক আসামি ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহেদ করিমকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এসময় তার কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বুধবার (১৫ জুলাই) ভোর ৫টা ১০ মিনিটে সাতক্ষীরার সীমান্তের দেবহাটা থানার সাকড় বাজারের পাশে অবস্থিত লবঙ্গপতি এলাকা থেকে নৌকায় পালিয়ে থাকা অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। শাহেদকে সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম থেকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হবে।
গত ৬ জুলাই করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগে র্যাব উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। এরপর রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেয়া হয়। ৭ জুলাই করোনা পরীক্ষা না করেই সার্টিফিকেট প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করে র্যাব।
মামলায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহেদ করিমকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এজাহারে। এরপর থেকেই পালিয়ে ছিলেন শাহেদ। তাকে গ্রেফতারে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় র্যাব। অবশেষে সাতক্ষীরা থেকে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় তারা।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ বলেন, ভোরে সীমানা অতিক্রম করে ভারতে যাবার পরিকল্পনা করছিলেন শাহেদ। আর তখনই তাকে ধরা হয়। তার কাছে একটা ম্যাগজিন, একটা পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি ও মোবাইল পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, শাহেদ একটি নৌকায় বোরকা পরে ছিলেন যেন তাকে চেনা না যায়। নদীর পাড়ে ওঠার আগেই তাকে ধরা হয়েছে। তার কাছ থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকায় ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
আশিক বিল্লাহ বলেন, শাহেদকে আমরা বিভিন্ন জায়গায় অনুসরণ করেই এখান থেকে ধরেছি। তিনি বারবার তার রূপ পরিবর্তন করেছেন। এর আগে তিনি তার সাদা চুল কালো করেছেন। দাড়িগোঁফ ফেলে দিয়েছেন। তবে তিনি সাঁতরিয়ে যেতে পারেননি। তিনি মোটা মানুষ তাই দৌড়াতেও পারেনি। তবে, নৌকার মাঝি সাঁতরিয়ে পালিয়ে গেছেন।
এরআগে, করোনার নমুনা পরীক্ষায় প্রতারণার একই অভিযোগে রিজেন্ট গ্রুপের এমডি মাসুদ পারভেজকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যার পর গাজীপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। করোনার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেয়াসহ নানা অনিয়ম ধরা পড়ায় ৭ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা বন্ধ করে দেয়া হয়।
এর পরপরই রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. শাহেদকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা (মামলা নম্বর- ৫) করে র্যাব। এর মধ্যে শাহেদসহ ৯জন গ্রেফতার রয়েছেন। ওই মামলায় শাহেদসহ নয়জনকে পলাতক হিসেবে এজাহারভুক্ত করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন-রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহেদ (৪৩), ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদ পারভেজ (৪০), অ্যাডমিন আহসান হাবীব (৪৫), এক্সরে টেকনিশিয়ান হাসান (৪৯), মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট হাকিম আলী (২৫), রিসিপশনিস্ট কামরুল ইসলাম (৩৫), রিজেন্ট গ্রুপের প্রজেক্ট অ্যাডমিন রাকিবুল ইসলাম (৩৯), রিজেন্ট গ্রুপের এইচআর অ্যাডমিন অমিত অনিক (৩৩), গাড়িচালক আব্দুস সালাম (২৫), নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রশীদ খান জুয়েল (২৮), হাসপাতালের কর্মচারী তরিকুল ইসলাম (৩৩), স্টাফ আব্দুর রশিদ খান (২৯), স্টাফ শিমুল পারভেজ (২৫), কর্মচারী দীপায়ন বসু (৩২) এবং মাহবুব (৩৮)। দু`জনের নাম জানা যায়নি।
এদিকে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান শাহেদকে নিয়ে তার উত্তরার বাসায় অভিযান চারিয়েছে র্যাব। বুধবার (১৫ জুলাই) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে র্যাবের একটি দল এ অভিযান শুরু করে। প্রায় এক ঘণ্টার অভিযান শেষে তাকে আবারও র্যাব সদর দফতরে নেয়া হয়েছে।
অভিযানে শাহেদের বাসায় বিপুল পরিমাণ জাল টাকা পাওয়া গেছে বলে নিশ্চিত করেছে অভিযানে অংশ নেয়া আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর একটি সূত্র।
তবে অভিযানের বিষয়ে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি এই মুহূর্তে কিছু বলতে রাজি হননি। র্যাবের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও জানান তিনি।