জুমার দিনে যে আমল করবেন
ইসলাম হলো পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম। মানব জীবনের প্রতিটি ধাপেই রয়েছে ইসলামের নির্দেশনা। আর মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ঘুরেফিরে আসে জুমাবার। জুমাবার নিয়ে রাসুলের একটি হাদিসে বর্ণিত আছে এমন, পৃথিবীর যত দিন সূর্য উদিত হবে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমাবার। এ দিনে আদম আ:-কে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এ দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছিল। সর্বশেষ কেয়ামত সংঘটিত হবে জুমাবারেই। সুতরাং জুমাবার হলো একটি শ্রেষ্ঠতম দিন। আর এই জুমাবারের রয়েছে অনেক গুরুত্ব। রয়েছে মর্যাদাপূর্ণ অসংখ্য আমলের সুযোগ।
* হাদিসে বর্ণিত জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল-
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বোঝো’। [সূরা জুমা, আয়াত : ৯]
জুমাবার সপ্তাহের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ দিন। এই দিনের ফজিলত সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসুল [সা.] বলেন, জুমার দিন সপ্তাহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং তা আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত। [ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৮৪]
* সুন্দর পোশাক পরিধান করা-
রাসুল [সা.] বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যদি তার নিকট থাকে। তারপর জুমার নামাজে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যায়। নির্ধারিত নামাজ আদায় করে। তারপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকে। তাহলে তার এই আমল পূর্ববর্তী জুমার দিন থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সমস্ত সগিরা গুনাহর জন্য কাফ্ফারা হবে। [আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৩]
* আগেভাগে মসজিদে যাওয়া-
জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন। এবং ক্রমানুসারে আগে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো— যে একটি মোটাতাজা উট কোরবানি করে। এরপর যে আসে সে ওই ব্যক্তি— যে একটি গাভী কোরবানি করে। এরপর আগমনকারী ব্যক্তি— মুরগি দানকারীর ন্যায়। তারপর ইমাম যখন বের হন, তখন ফেরেশতাগণ তাদের লেখা বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনতে থাকেন। [বুখারি, হাদিস : ৯২৯]
* সুরা কাহাফ তিলওয়াত-
মর্যাদপূর্ণ এই দিনের বিশেষ একটি আমল হচ্ছে সুরা কাহফ তিলওয়াত করা। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে তার জন্য দুই জুমা পর্যন্ত নূর উজ্জ্বল করা হবে। (আমালুল ইয়াওমী ওয়াল লাইল, হাদিস : ৯৫২)
* বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা-
এই দিনের আরেকটি আমল হচ্ছে নবীজীর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। এই মর্মে রাসূল সা: বলেন, তোমরা এই দিনে আমার ওপর অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করো। কেননা তোমাদের দরুদ আমার সম্মুখে পেশ করা হয়ে থাকে। [আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৭]
* দোয়ার প্রতি গুরুত্ব দেয়া-
জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ একটি আমল হচ্ছে দোয়ার প্রতি মনোনিবেশ করা। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত এমন আছে যে, তখন কোনো মুসলমান আল্লাহর নিকট যে দোয়া করবে আল্লাহ তা কবুল করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)
* সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করা-
আবু সাঈদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহফ পাঠ করবে, তার জন্য দুই জুমা পর্যন্ত নূর উজ্জ্বল করা হবে। [আমালুল ইয়াওমী ওয়াল লাইল, হাদিস : ৯৫২]
সম্মানিত ভাই ও বোন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে জুমারের আমল করার তৌফিক দান করুক। প্রত্যেক মুসলমানের উচিত জুমাবারের এই অপূর্ব সুযোগ কাজে লাগানো। এই মাধ্যমগুলো মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের নাজাতের জন্য কবুল করে জান্নাতের পথকে আরো সহজ করে দেবেন।-আমিন।