আদি প্রলাপ: খেরোখাতার মায়াকথন একটি ঝুঁকিপূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়নের নাম, সম্মিলিত সাহসের নাম, নবীন লেখকদের এক্সপেরিমেন্টের নাম, সর্বোপরি ভালোবাসার নাম। বইটি দশটি ভিন্নমাত্রিক প্রবন্ধে পরিপূর্ণ। প্রাথমিকভাবে সম্মিলিত প্রচারণার পর পাঠশালা ( Centre for Basic Studies) গ্রুপের প্রাণ সাহাদাত হোসাইন স্যারের প্রাঞ্জল সমর্থনে আজ পাঠশালার বহু পাঠকের ভালোবাসায় আবৃত ও আদৃত পুরো বইটিই। একইসাথে পেয়েছে পাঠশালা গ্রুপের মাসিক পাঠ্যতালিকায় একটি উল্লেখযোগ্য মর্যাদা।
চয়ন প্রকাশন থেকে বের হওয়া এ বইয়ের সম্পাদনায় ছিলেন কবি ওয়াসীম হক। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন হাসিনা আক্তার হিমী এবং চমৎকার অর্থপূর্ণ প্রচ্ছদটি এঁকেছেন নওয়াজিশ শিউল।
বইটির নানান রিভিউ চোখে পড়ছেই। তা মুগ্ধ করছে, অনুপ্রাণিতও করছে। এখন যে লেখাটি নিয়ে উপস্থিত হলাম, এটি কোনো বুক রিভিউ নয়। কারণ এতে শুধু বইটির বিষয়বস্তুর আলোচনাকেই মুখ্য করেছি। বইটির ভালো-মন্দের আলোচনা আমি এ দশজন লেখকের বাইরের বিশ্লেষণধর্মী লেখক ও পাঠকদের উপরই ছেড়ে দিয়েছি। খুব করে চাই বইটি সবার হাতে পৌঁছুক, একইসাথে চাই এটি সমালোচিতও হোক। তাতেই আমাদের কলম ও এর গতি ঋদ্ধ হওয়ার সাথে বেগবানও হবে।
এ বেলায় প্রবন্ধসমূহের আলোচনায় ফেরা যাক। সূচিপত্রানুসারেই ধারাবাহিকভাবে সাজানো হয়েছে আলোচনাটি।
*গ্রামবাংলা-প্রশান্তির ছায়াতলে যেখানে হৃদয়ের বাস
এ প্রবন্ধটি প্রাবন্ধিক আনিকা তাবাসসুম রিশা রচিত। পাঠশালায় আমরা যাঁরা নিয়মিতভাবে আপডেটেড থাকি, তাঁদের অনেকেই জানি আনিকা তাবাসসুম রিশা অসাধারণ গল্পপাঠ করেন। এবং তাঁর কণ্ঠে রেকর্ডকৃত এসব গল্প ‘সাহিত্য সমাহার’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে নিয়মিতভাবে আপলোড হয়। একইসাথে তিনি একজন প্রাবন্ধিকও।
গ্রামীণ পরিবেশের একটা চমৎকার চিত্র তিনি পরপর সাজিয়েছেন বইয়ের প্রথম প্রবন্ধতে । গ্রামে প্রতিটা প্রধান ঋতুই অর্থাৎ গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত, বসন্ত কেমন বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে হাজির হয়, এবং সেই সৌন্দর্যকে উপলক্ষ্য করে গ্রামের মানুষেরা কীরূপ উৎসব আয়োজনে মেতে ওঠেন, এসবের ধারাবাহিক বর্ণনা এতে ঠাঁই পেয়েছে।
বর্ণনার মাঝে মাঝে গ্রামীণ প্রসঙ্গে লেখা বেশ কিছু কবিতা-ছড়ার উদ্ধৃতিগুলো এই বর্ণনাকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলেছে। এছাড়া গ্রামের গৃহস্থ সম্পর্কিত এমন কিছু উপাদানের উল্লেখ এতে লেখিকা এনেছেন, যা গ্রামের মাটি ছেড়ে আসা যে কোনো পাঠককে স্মৃতিকাতর করতে বাধ্য করবে।
প্রবন্ধের মাঝপর্যায়ে শহর ও গ্রামের তুলনামূলক আলোচনা স্থান পেয়েছে। খুব সভ্যতামণ্ডিত এবং সুযোগ-সুবিধাময় হয়েও শহর কতদিক থেকে গ্রামের চেয়ে পিছিয়ে আছে, সেসবের একটা চিত্র তিনি স্পষ্ট করে তুলেছেন প্রাঞ্জল বর্ণনায়। একইসাথে প্রবন্ধের প্রায় শেষ অংশে গ্রামীণ ঐতিহ্যের হারিয়ে যাওয়ার প্রকট আক্ষেপও বেশ করুণভাবে এতে লেখিকা প্রকাশ করেছেন।
মোটকথা, গ্রাম্য এলাকার সৌন্দর্য, ঐতিহ্য, স্বতন্ত্রতা, একইসাথে তথাকথিত সভ্যতার যাঁতাকলে পড়ে গ্রামীণ ঐতিহ্যের মুমূর্ষু অবস্থার চিত্র ফুটিয়ে তুলে পুরো প্রবন্ধকে সার্থক করতে পেরেছেন প্রাবন্ধিক।
*আহমদ ছফার সৃষ্টিকর্ম ও তার প্রাসঙ্গিকতা
প্রায় সকল সাহিত্যসচেতন পাঠকমাত্রই আহমদ ছফার সাহিত্যকর্মের অনুরক্ত। বইয়ের দ্বিতীয় প্রবন্ধটি ছফার সেই সাহিত্যকর্মের বিশ্লেষণ নিয়েই লেখা। লিখেছেন আমাদের সকলেরই প্রিয় এম আর রাসেল ভাই।
ছফা তাঁর প্রবন্ধ এবং উপন্যাসের মাঝে যে দেশ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সচেতনতার একটি উজ্জ্বল ছাপ রেখে গিয়েছেন, এবং সেসব ভাবনায় ওঠে আসা জাতীয় ও সাংস্কৃতিক সংকটগুলো যে এখনও আমাদের দেশে অস্তিত্বশীল, এসব নিয়েই এই প্রবন্ধের আলোচনা এগিয়েছে। এ প্রবন্ধের মাঝে প্রাবন্ধিক এ স্বীকারোক্তি রেখেছেন যে, ছফার রচনাকর্ম তাঁর মাঝে কতটুকু জ্ঞানের তৃষ্ণা জাগিয়ে তুলেছে।
পার্থিব সম্পদ লাভের চেয়ে জ্ঞানের সম্পদ অর্জন করাটাই যে জীবনের ব্রত হওয়া উচিত, এই ভাবোদয়ই প্রাবন্ধিক এ প্রবন্ধে তুলে ধরেছেন। আহমদ ছফার মাঝে বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে যেমন চিন্তা-দুশ্চিন্তা কাজ করেছে, একইসাথে এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার বিভ্রান্তিময় দশা নিয়ে তিনি যে প্রশ্নগুলো রেখে গিয়েছেন, এ সচেতনতা ও প্রশ্নের উত্তর খোঁজার তাগিদ প্রাবন্ধিক এতে অনুভব করেছেন।
ছফার রচনাকর্মের প্রতি কোনোরূপ অন্ধ মোহময়তা নয় বরং তাঁকে সঠিকভাবে মূল্যায়নের একটি জোর আহ্বানও তিনি রেখেছেন এই প্রবন্ধে। সব মিলিয়ে আহমদ ছফার মত দেশ, এর রাজনীতি ও ভাষা সংক্রান্ত স্বচ্ছ ভাবনার একটি প্রতিশ্রুতি নিয়েই যেন আমরা জ্ঞানার্জনের পথে পা বাড়াই, এবং এ পথে চলতে গিয়ে আহমদ ছফার মত নিবেদিতপ্রাণ ও প্রকৃত বুদ্ধিজীবীদের মূল্যায়ন করি, এমন আহ্বান রেখেই প্রাবন্ধিক এম আর রাসেল এ আলোচনার ইতি টেনেছেন।
*বই হোক উত্থানের হাতিয়ার
এ প্রবন্ধটি লিখেছেন নবীন লেখক জসিম উদ্দিন। বই পড়ার গাঢ় গুরুত্বের সাবলীল বর্ণনাকে সঞ্চয় করে তিনি তাঁর প্রবন্ধের সমস্তটাই সাজিয়ে তুলেছেন। বন্ধু হিসেবে, অবসরের সঙ্গী হিসেবে, জ্ঞানতৃষ্ণা মেটানোর নিয়ামক হিসেবে এবং কল্যাণের পথপ্রদর্শক হিসেবে বই যে কতটা আন্তরিক ভূমিকা পালন করে, এসবের দারুণ স্বীকারোক্তিকে অবলম্বন করে তিনি এই প্রবন্ধের প্রায় সিংহভাগ বাক্য পরপর সাজিয়ে নিয়েছেন।
বইপাঠের গুরুত্বকে আরো জীবনমুখী প্রমাণে তিনি ওমর খৈয়াম, প্রমথ চৌধুরী, আহমদ ছফা ও আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের মত জ্ঞানের আলোকবর্তিকার পথপ্রদর্শকদের উক্তি উদ্ধৃত করেছেন আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে। একইসাথে তুলে ধরেছেন ওয়ারেন বাফেট ও বিল গেটসের মতো সফল উদ্যোক্তাদের বইপাঠের রুচির গল্পটুকুও।
জীবন, মনন ও ব্যক্তিত্ব গঠনে বইপাঠের সীমাহীন প্রয়োজনীয়তাকে অনুভব করতে জসিম উদ্দীনের এই প্রবন্ধটি আপনাকে বেশ সাহায্য করবে বলেই বিশ্বাস করি।
*বিস্ময়গাথা: পুতুলনাচের ইতিকথা
এটি আমার নিজের লেখা। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম সেরা উপন্যাস ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’র মূল দুটি চরিত্র ‘শশী’ ও ‘কুসুম’-এর মনস্তাত্ত্বিক ও মনোদৈহিক বিশ্লেষণ নিয়েই এ প্রবন্ধটা আমি সাজিয়েছি। এছাড়া শহর থেকে ডাক্তারি পাশ করে নিজ গ্রামে ফিরে প্র্যাকটিস চালিয়ে যাওয়া শশী চরিত্রের মাঝে শহর নাকি গ্রামের জীবন, কোনটা বেশি সার্থক, এ নিয়ে জন্ম নেয়া বিভ্রান্তি ও আত্মবিরোধী দর্শন নিয়ে অল্প কিছু আলোচনা করেছি। নিজের লেখা বলেই অত বিশ্লেষণে আর যাচ্ছি না। আমার এ লেখাটি যদি ইতোমধ্যে অন্য কেউ পড়ে থাকেন, তবে তাঁর কাছ থেকেই এর বিশ্লেষণ শোনার অপেক্ষায় আছি।
*আমার নজরুল
এ প্রবন্ধটি লিখেছেন পাঠশালারই প্রিয়মুখ মাসুমা খান হুমায়রা। ছ’মাস আগে ‘কলম’ নামে তাঁর একটি একক কাব্যগ্রন্থও বেরিয়েছে। সেই কাব্যগ্রন্থেই আমরা টের পেয়েছি কবিতার প্রতি মাসুমা আপুর ভালোবাসা, যা এ প্রবন্ধতেও স্পষ্ট হয়ে ধরা দিয়েছে পাঠকের কাছে।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কবিতা বেছে নিয়ে প্রাবন্ধিক সেসবের মাঝে বিদ্যমান নানামুখী বৈচিত্র্যময় আবেগ, অনুভূতিকেই বের করে এনেছেন। প্রবন্ধে তিনি দেখিয়েছেন নজরুলের সৃষ্টির আনন্দ, বিদ্রোহ, প্রেম, অভিমান, লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার প্রতিক্রিয়া, এবং গভীর জীবনদর্শনের প্রলেপে সাজিয়ে তোলা চমৎকার সব কাব্যের আলোচনা।
একইসাথে নজরুলের এ সমস্ত কবিতার মাঝে যে আবেগ ও অনুভূতিগুলো মিশে আছে, সেসবের সাথে সাধারণের অনুভূতির মিশ্রণে সেসব রচনা যে আরো জীবন্ত হয়ে ওঠেছে, এমন তুলনামূলক আলোচনাই তিনি এতে এনেছেন।
এ প্রবন্ধের আলোচনা ঠিক প্রবন্ধসুলভ নয়, বরং একজন কবির ছন্দময় কলমের মতই গতিশীল। এটি পড়তে গিয়ে কোথাও কোনো বাধা পাওয়া যাবে না। বরং একটু পরপর নজরুলের কবিতার উদ্ধ্রৃতি এবং এরপর সেই কবিতা নিয়ে লেখিকার প্রতিক্রিয়া, এসবের মাঝে একটা ছন্দময় ধারাবাহিকতাটুকুই পাঠক উপভোগ করবে বলেই আমার বিশ্বাস।
নজরুলের কবিতার বৈচিত্র্যময়তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা জরুরী। তবে এই প্রবন্ধের লেখিকার হাত দক্ষ বলেই স্বল্প পরিসরের মাঝে তিনি নজরুল ও তাঁর সাহিত্য নিয়ে বিশ্লেষণাত্মক আলোচনাকে স্থান দিতে পেরেছেন। সর্বোপরি, এ প্রবন্ধের আলোচনাটি সুখপাঠ্য।
*কুরআনের গাণিতিক সৌন্দর্য
এটি লিখেছেন মাহমুদুল হাসান ফয়সাল। তাঁর এ প্রবন্ধটি এ বইয়ের অন্যান্য প্রবন্ধের চেয়ে ভিন্ন বিষয়ক। তিনি লিখেছেন মহাগ্রন্থ আল কোর’আনের গাণিতিক সৌন্দর্য নিয়ে। কু’রআনের অসংখ্য চমৎকার দিক রয়েছে, যা নিয়ে গোটা বিশ্বে বিগত সময়েও বহু গবেষণা হয়েছে, এখনও যা চলমান রয়েছে। তাই বহু অমুসলিম গবেষকের কাছেও এ গ্রন্থটি একটি বিস্ময়ের নাম। এ গ্রন্থেরই গাণিতিক সৌন্দর্য নিয়ে স্বল্প পরিসরে প্রাবন্ধিক এতে আলোচনা করেছেন।
*একটি অরাজনৈতিক ঝগড়া
এ রচনাটি লিখেছেন মাহজেবিন মম। এ প্রবন্ধ সংকলনের মাঝে এটিই একমাত্র রচনা, যা কোনো প্রবন্ধ নয় বরং গল্প। এবং আরো চমৎকার ব্যাপার হলো, এ গল্পটি নিছক গল্পের জনরায় আটকে থাকেনি। মাহজেবিন মম আপু পাঠশালায় ‘অরাজনৈতিক ঝগড়া’ শিরোনামে একটি সিরিজ নিয়মিতভাবে লিখে যাচ্ছেন। এ গল্পটি সেই সিরিজেরই একটি গল্প। যাঁরা সেই সিরিজের সাথে পরিচিত, তাঁরা জানেন, এ সিরিজে মাহজেবিন মম দু’টো স্বামী-স্ত্রীর চরিত্রকে তুলে ধরেছেন, যাদের নিয়মিত খুনসুটিময় আলাপ-প্রলাপের মাঝে চলমান আন্তর্জাতিক কিংবা জাতীয় ইস্যু ওঠে আসে। এবং সেসব বিষয় খুব গাম্ভীর্যপূর্ণ আলোচনা হিসেবে নয় বরং হাস্যরসের মাধ্যমেই ওঠিয়ে আনা হয়। এ সিরিজের গাম্ভীর্যের ভূমিকায় থাকে স্বামী চরিত্রটি, এবং তার গাম্ভীর্যের ভারসাম্য রক্ষায় তার কথার জবাবে রসিকতাপূর্ণ সংলাপগুলো হয় স্ত্রী চরিত্রের। বইয়ের এ গল্পেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। পাঠক নিশ্চিতভাবে এটি উপভোগ করবেন।
*দুয়ার খুলে দাও
এ রচনাটি বেরিয়ে এসেছে মোস্তফা কে মুরাদ আহমেদ’র কলম হতে। এটি একটি আত্মস্মৃতিমূলক রচনা। তবে একে যদি পাঠকের প্রতি লেখকের পাঠানো একটি চিঠি হিসেবে বিবেচনা করি, তাহলে বলা যায় এটি নিসন্দেহে একটি দারুণ চিঠি । এবং এ চিঠিতে প্রেরকের ভূমিকায় থাকা লেখক সকল মানুষেরই শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিকে নাড়া দিয়েছেন।
আরো নাড়া দিয়েছেন সকল বয়েসী মানুষের আবেগিক অনুভূতিকেও। কোনটি অভিমান, কোনটি ক্ষোভ, কোনটি রাগ, এবং ক্ষেত্রবিশেষে এর প্রকাশভঙ্গিই বা কেমন, এ নিয়ে গল্পে গল্পে জীবনের কঠিনতম বাস্তবতাকে লেখক তুলে ধরেছেন। এটি পড়তে গিয়ে আমার বারবার মনে পড়ছিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নীললোহিত চরিত্রটি, যার মাধ্যমে সুনীল তার আশেপাশের পরিবেশ-প্রতিবেশ, মানুষ ও তার মানসিকতার গল্পই বলে গিয়েছেন। মোস্তফা কে মুরাদের এ লেখাটিও যেন সেই নীললোহিতেরই গল্প। বইয়ের এই খোলা চিঠিময় রচনাটি নিসন্দেহে একটি উপভোগ্য রচনা।
*বাংলা সাহিত্যের পাঠকপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র
এ প্রবন্ধটি লিখেছেন পাঠশালার অতি প্রিয়মুখ রায়হান আতহার। এখানে তিনি আলোচনায় এনেছেন প্রায় সকল পাঠকের সব রকমের প্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র। যেমন তিন গোয়েন্দা, মাসুদ রানা, ফেলুদা, ব্যোমকেশ বক্সী, কাকাবাবু, টেনিদা, ইত্যাদি। এ প্রবন্ধে গোয়েন্দা চরিত্রগুলো নিয়ে বিশ্লেষণাত্মক কোনো ব্যাখ্যায় লেখক যাননি, শুধু সংক্ষেপে বইগুলোর লেখক ও এসব প্রকাশের সময় সম্পর্কে বেশ কিছু চমৎকার তথ্য দিয়েছেন। তবে এ প্রবন্ধটি পড়লে অবশ্যই গোয়েন্দাপ্রিয় সকল পাঠকই নস্টালজিক হতে বাধ্য।
*সমাজকে নয়, চলুন বদলে ফেলি নিজেকে
বইয়ের সর্বশেষ প্রবন্ধটি আমাদের সকলের প্রিয়মুখ সুইটি শিলা’র লেখা। আমরা সবাই সুইটি শিলাকে পাঠচক্রের বেশ কিছু ক্লাসের আয়োজক এবং আলোচক হিসেবেই জানি। কিন্তু তিনি যে একইসাথে লেখনীর মাধ্যমেও চমৎকার বিশ্লেষণ এবং গঠনমূলক আলোচনা করতে পারেন, তার প্রমাণ তাঁর এই প্রবন্ধটি।
প্রবন্ধের প্রাঞ্জল বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন যে, সমাজ ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে আমাদের ইতিবাচক পরিবর্তন জরুরি। বইয়ের দারুণ আলোচক ফাতেমা শারমিন রিক্তা আপু ‘খেরোখাতার মায়াকথন’ বইটির একটি রিভিউ লিখেছিলেন। সুইটি শিলার প্রবন্ধের রিভিউতে তিনি বলেছিলেন,
“এ প্রবন্ধে একজন ব্যক্তি তার নিজের সাথে সাথে তার পারিপার্শ্বিকতারও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম এবং এভাবেই যে সমাজ, জাতি এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের পরিবর্তন সম্ভব, এটি নিয়েই তিনি প্রাঞ্জল আলোচনা রেখেছেন। একইসাথে তিনি এটি বিশ্বাস করেন, এই পরিবর্তনের জন্য জ্ঞানের সঠিক বিকাশ এবং আমাদের মানবিক গুণাবলির বিকাশ খুবই জরুরি। নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণাদায়ক বক্তব্যসম্বলিত প্রবন্ধ।”
অন্ত প্রলাপ: সুদীর্ঘ এ আলোচনার জন্যে আগামভাবে ক্ষমাপ্রার্থনাটুকু বেশ জরুরী ছিল। এখন সেই ক্ষমাপ্রার্থনার অংশটুকু প্রকাশ করলাম। আশা করছি খেরোখাতার মায়াকথন -এর মূল সুর সকলেই ধরতে পেরেছেন। আত্মপ্রচার নয়, বরং নবীন লেখকদের সামান্য পরিমাণ অনুপ্রেরণা ও সমর্থন দিলেই যে একটি দারুণ সংকলন জন্ম নিতে বাধ্য, তারই একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এ সংকলন। সকলের পাঠ সমৃদ্ধ হোক, পৃথিবীটা শুদ্ধ জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র হোক।
দশজন উদীয়মান লেখকের নতুন প্রবন্ধের বইটি পাওয়া যাবে অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চয়ন প্রকাশনের ৫২৭ নম্বর স্টলে। মেলার বাইরেও ঘরে বসে বইটি রকমারিসহ অন্যান্য অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে সংগ্রহ করা যাবে।
লেখক- তানসীর আলম, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক।