এতোসব কিছু জানার পরেও আমাদের মানার পরিধি কম। এর কারণ হলো, আমারা শুধু নামে মুসলিম হয়ে আছি। আমরা ইসলামকে পরিপূর্ণ জানার চেষ্টা করি না। বুঝার চেষ্টাও করি না। কিংবা যেটুকু জানি তার কিঞ্চিৎ আমল করারও প্রয়োজন মনে করি না। অথচ এই রমজান সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- [ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্বপুরুষদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।] আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতের মাধ্যমে মুমিনদের জানিয়েছেন রোজা কেবল তোমাদের উপর ফরজ করেছি এজন্যই যে, যাতে তোমরা তাকওয়ার গুণাবলি আয়ত্ত করতে পারো। পরিশুদ্ধ হতে পারো। প্রশান্তি লাভ করতে পারো। কিন্তু মানুষরা হলো এমন বেত্তমিজ জাতি। এদের কোন কিছুতেই খেয়াল থাকে না। খবর থাকে না। বেখবর। না লালন করে দুনিয়ায় শান্তির জীবন। না আশা করে পরকালে মুক্তির জীবন।
তো যারা বেখবর জীবন নিয়ে হায়াত শেষ করে তাদের জন্যই রয়েছে ভয়াবহ শাস্তির দুঃসংবাদ। তাদের খেয়াল নেই এই সিয়াম কেন ফরজ করা হলো? কেনই বা বলা হলো রমজান তাকওয়া অর্জনের মাস। এই বিষয়গুলো চিন্তা করলেই দেখতে পাই কতো রকমের সুযোগে ভরপুর হয়ে আছে রমজান। রমজান মাসেই রয়েছে ইবাদতের অপূর্ব সুযোগ। প্রভুকে সন্তুষ্টি করার সুযোগ। এবং সিয়ামের মাধ্যমে নিজের আত্নাকে পরিশুদ্ধ করার সুযোগ। কিন্তু আমরা বেমালুম। সমস্ত জীবন ভুলের মাঝে কাটাই। অন্যের দোষ খুঁজে কাটাই। নানান অপকর্মের মাঝে কাটাই। এমনকি মহত্ত্বের মাসে ইবাদতের সুযোগ পেয়েও অবহেলা করে করে কাটাই।
রমজানেই আমরা অন্যসব মাসের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি বাজার করি। যাতে বিলাসবহুল খাবারে দেহ ও মন শান্তি পায়। চাঙা রাখা যায়! আমরা জানি না কম আহারের মাঝেই সুস্থতা আছে। শান্তি আছে। তৃপ্তি আছে। রাসুল তো বলেই দিয়েছেন ” তোমরা ক্ষুধা নিয়ে খেতে বসো, আবার ক্ষুধা নিয়ে উঠে যাও” তাই আজকের চিকিৎসা বিজ্ঞানও বলছে মানুষ যতো কম খাবে ততো সুস্থ থাকবে। এই খাবার বিষয়ে হাদিসে আরো আরো বিধিনিষেধ রয়েছে, ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। অথচ আমরা এসব জানতে ও মানতে নারাজ। ইসলাম ও সিয়াম তো মানুষের মাঝে শুধু খাবারের জন্য আসেনি। সিয়াম এসেছে মানুষকে আত্মশুদ্ধি শেখাতে। সংযম শেখাতে। একইসাথে নৈতিকতা শিক্ষা দিতে। যাতে মানুষ সুস্থ ও সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে পারে।
সিয়ামের এই আত্মশুদ্ধি। সংযম। ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা না থাকার ফলে মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। নানান সমস্যা। আজ সমাজের দিকে তাকালেই দেখতে পাই। মানুষে মানুষে বৈষম্য। ধনী ও গরীবে বৈষম্য। হিংসা ও বিদ্বেষ। হানাহানি। মারামারি। খুন আর রাহাজানি। এসবেই জড়িয়ে আছে মানুষ। অন্ধকারে কালো হয়ে আছে সমাজ। মানুষের মাঝে আত্মশুদ্ধি ও নৈতিক শিক্ষার অভাবে এসব অপকর্ম হয়ে আসছে। করে আসছে। রাসুল [ সা.] বলেছেন- ” যে ব্যাক্তি মিথ্যা বলা ও অপকর্ম ত্যাগ করতে পারলো না, তার দিনের বেলায় পানাহার থেকে বিরত থাকা আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই” অথচ মানুষ মিথ্যা বলে ব্যবসা ও নানান অপকর্ম করে বেড়ায়। এই রমজান মাসেও অবৈধ ব্যবসা চালু করে রেখে বাজার থেকে বাজারে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে চলছে। যা ইসলামে অবৈধ। এবং হারাম।
লেখক- মিজান ফারাবী, কবি ও প্রাবন্ধিক।