মোঃ জাকির হোসেন (তামিম)
বিশ্বে প্রায় প্রতিটি মানুষের রয়েছে কিছু না কিছু মানষিক রোগ। মানুষ ভেদে বিভিন্ন ধরণের এবং তাদের মন-মানসিকতা ভেদেও অনেক রকমের মানসিক সমস্যা থেকে থাকে। মানসিক সমস্যা স্বাভাবিকভাবেই তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না, উপরন্তু এমন কিছু মানসিক সমস্যা ও আছে যার অস্তিত্ব আমরা বিশ্বাস ও করতে পারি না। তবে আসুন! আজ জেনে নেওয়া যাক তেমনই অদ্ভুত কিছু মানষিক রোগের সম্পর্কে!
১) অটোফ্যাজিয়া : অটোফ্যাজিয়া হল এমন এক রোগ, যে রোগে আক্রান্ত মানুষ ক্রমাগত নিজের শরীরকে ব্যাথা দেবার প্রয়োজন অনুভব করে থাকেন। এটা স্বাভাবিক।কারন মানুষ প্রতিনিয়ত একটি নিদিষ্ট ডেসিবল ব্যথা আপনাতেই অনুভব করে তবে অস্বাভাবিক বিষয়টা হলো, নিজেকে কষ্ট দেওয়ার প্রক্রিয়াটি! অটোফ্যাজিয়া আক্রান্ত রোগী নিজের শরীর কামড়ায় এমনকি কখনো কখনো অসহ্য যন্ত্রনা অনুভব করে খেয়েও ফেলে। অতিরিক্ত বিষণ্ণতা, সিজোফ্রেনিয়া এসব মানসিক সমস্যার পাশাপাশি অটোফ্যাজিয়া ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা দিতে যায়।
২) অ্যামপিউটি আইডেন্টিটি ডিজঅর্ডার : ধরুন আপনি এ রোগে ভুগছেন! আপনার মনে হতে, আপনার একটি চোখের প্রয়োজন নেই অথবা একটি কিডনীর! অতিরিক্ত অঙ্গ ছাড়াই আপনি সাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন! ব্যাপার কি মনে হয়! হাস্যকর? কিন্তু এটা ভয়াবহ রোগে আক্রান্তদের ক্ষেতে! যেকোন মূহুর্তে মনে হলে এটা চোখ দরকার নেই।ব্যাস, কাটা চামচ দিয়ে গেলে দিলেন। এমনি বীভৎস এই রোগের পরিনতি!
৩) প্যারিস সিনড্রোম : মজার মানষিক রোগ! হা হা হা। এটি হয় প্যারিসে বেড়াতে আসা জাপানি ট্যুরিস্টদের । কারন হিসাবে বলা যায়, জাপানিরা একটু বেশিই নমনীয় স্বভাবের হয়ে থাকে এবং বিনয়ী তো বটেই! কর্কশ বা দায়সারা স্বভাবের ফরাসীদের আচরণে তারা একটা “কালচার শক” পায়, এরই একটি রূপ হলো প্যারিস সিনড্রোম।
৪) ডায়োজেনেস : প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক ডায়োজেনেস এর নাম অনেকেই শুনে থাকবেন।তার নামেই এই সমস্যাটির নামকরন!ভদ্রলোক বাস করতেন একটি পিপার ভেতরে এবং বিশ্বাস করতেন বিশ্ব-সমাজের সবকিছুই প্রায় অর্থহীন, মানুষ নিজেও তুচ্ছ একটি প্রাণী। আক্রান্ত রোগী নিজেকে প্রচণ্ড রকমের অবহেলা করে থাকে। অন্য সবাইকে এড়িয়ে চলে। সাধারণতভাবে বৃদ্ধদের এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।বাংলাদেশী সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ এর কিছু নাটকে উনিও অনেক টা এরকম চরিত্র এনেছিলেন!
৫)অনিওম্যানিয়া : শপোহলিক! মানে সেসব মানুষদের যারা কথা বলছি, যারা কেনাকাটা করতে শুরু করলে আর থামতে পারেন না যতক্ষণ না পুরোপুরি ভাবে ফতুর হয়ে না থাকেন ততক্ষন পর্যন্ত তারা উন্মাদের মতো কেনাকাটা করতেই থাকেন। এটাও কিন্তু একটা মানসিক রোগ। যেটা নাম দেয়া হয়ছে অনিওম্যানিয়া।
৬)কটার্ড’স সিনড্রোম : এটি একটি স্নায়বিক এবং মানসিক একটি রোগ। এখানে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে মৃত মনে করেন। আবার অনেক সময় অমর বলেও মনে করে থাকেন।মরার পর পারিপার্শ্বিক অবস্থা জানার এক ধরনের ইচ্ছা এ ক্ষেত্রে কাজ করে। মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে কে কাঁদবে, কে তাকে নিয়ে কী আলোচনা করবে, সাব কনসাস মাইন্ডে অনেকেই এসব ভাবনা ভেবে থাকে। তবে সে জন্য তাকে কোটার্ড সিনড্রোমে আক্রান্ত হতে হবে।
কোটার্ড সিনড্রোম হচ্ছে একটি রোগ, যেখানে রোগী মনে করে তিনি জীবিত নেই, তার কেবলমাত্র শরীরটাই আছে, তার আত্মা চলে গেছে তাকে ছেড়ে বহু আগেই!
যখন বিষন্নতা মনকে পুরোপুরি গিলে ফেলে, তখন ব্যক্তিটি নিজেকে নিজে হীন-নীচ এসব ভাবতে শুরু করে দেন, নিজেকে প্রচন্ডভাবে ঘৃণা করতে থাকেন, নিজেকে হেয় করেন। অসহায় ভাবেন। দুনিয়ায় তার থাকা না থাকায় কিছুই যায় আসে না; এমনটাই ভাবতে থাকেন।হীনমন্যতা তার মধ্যে চলে আসে। নিজেকে অস্তিত্ব বিলীন মনে করেন।
ড.জুলিয়াস কোটার্ড ১৮৮২ সালে কোটার্ড সিনড্রোমের মতো বিরল রোগের সর্বপ্রথম ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন যে , ‘কোটার্ড সিনড্রোম হচ্ছে এমন এক মানসিক সমস্যা, যেখানে রোগী ডিল্যুশনে ভোগে নিজের শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ, রক্ত, শরীরের অংশ কিংবা নিজের আত্মারও অস্তিত্ব খুঁজে পায় না।’
এসব ক্ষেত্রে রোগী একাকী বসবাস করতে চান। মর্গ- কবর- চিতা অর্থাৎ যেখানে মৃত শরীর থাকে, সেখানেই থাকতে তার ইচ্ছে হয়। এ নিয়ে প্রচুর কেস স্টাডিও আছে অহরহ।
৭)ক্লিনিক্যাল লাইক্যানথ্রপি : কখনো বিড়াল,কখনো কুকুর কিংবা যেকোন প্রানী হয়ে যান আক্রান্ত ব্যক্তি! অবাক হচ্ছেন! না বাস্তবিক ভাবে হন না বা হয় তো সম্ভবও নয়। রোগীদের ভেতর বা মনোজগতে ব্যাপার এতটাই গাড় হয় যে,তিনি অনুভব করে তার দেহ-মন কাঙ্ক্ষিত প্রানীতে রূপ নিয়েছে।গ্রাম গন্জে ঘুড়ে হাজারো নমুনা দেখা সম্ভব। কেউ বানর কেউ বা হায়েনা! অদ্ভুত রোগের ভেতর এ রোগটি আমরা সচরাচর দেখতে পেয়ে থাকি!
যা হোক, ভেবে দেখুন তো! এসব রোগের কোনটা কি কখনো সামান্য হলেও আপনার উপর প্রভাব ফেলে নি! অবচেতন মনে পড়ছেন। তাই সাবধান হোন। অদ্ভুদ রোগ আজ অদ্ভুত বললেও কাল সেটা আপনার জন্য স্বাভাবিক হচ্ছে কি না?আশা করি হবে না। কারন ইতিমধ্যে অদ্ভুত সেই রোগ নিয়ে আলোচনা করেছি যার ফলে আপনাদের সতর্ক হবার সুযোগ হয়েছে। বিন্দুমাত্র টেনশন – হতাশা- বিষন্নতা – স্বপ্নভঙ্গ যাই হোক না কেন! অবশ্যই কাউন্সিলিং নেবেন। নিয়মিত যোগ আসন – ব্যায়াম।প্রফুল্লতা আপনাকে এসব রোগ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করবেন। চিন্তা না করে পরিকল্পনা করুন। পড়ে গিয়ে বসে পড়বেন না, আবার দৌড়াতে থাকুন।
কারন আধার হোক কিংবা আলো। মেনে নিতে পারলে দুই ভাল। সুস্থ-স্বাভাবিক থাকুন যে কোন পরিস্থিতিতেই! নিয়মিত মনোবিজ্ঞান চর্চা করুন।