চট্টগ্রামে কিডনী ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচারের মূলহোতাসহ গ্রেফতার

গত ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ খ্রিঃ বিকাল ৫ ঘটিকায় র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানাধীন ইন্ডিয়ান ভিসা অফিসের নিকট অভিযান পরিচালনা করলে র‌্যাব সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে চক্রের সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে র‌্যাব সদস্যরা আসামীদের আটক করতে সক্ষম হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামী হলেন- ১। মোহাম্মদ আলী ডালিম (৩৫), পিতা-মোঃ মতিউর রহমান শেখ, সাং-বাসুদিয়া, ০৪নং ওয়ার্ড, সিদ্ধিরগঞ্জ ইউপি, থানা-লৌহজং, জেলা-মুন্সীগঞ্জ, ২। মোঃ আতিকুর রহমান রনি (৩৬), পিতা-মৃত হাবিবুর রহমান, মাতা-মৃত হেনা আক্তার, সাং-আখড়া বাজার, থানা-কিশোরগঞ্জ সদর, জেলা-কিশোরগঞ্জ, ৩। মোঃ আলম হোসেন (৩৮), পিতা-মৃত মুজিবুর রহমান হাওলাদার, সাং-সুম্বুক, বাশকান্দি ইউপি, থানা-শিবচর, জেলা-মাদারীপুর।

আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা সাইফুল ইসলাম নামে একজন অসহায় লোককে ৪,৫০,০০০ (চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকায় কিডনী বিক্রিতে উদ্ধুদ্ধ করছে। তাকে ইন্ডিয়াতে পাচার করার জন্য আসামীরা তার পাসর্পোটে ভিসা লাগানোর কাজে সহযোগীতায় ব্যস্ত ছিল। এসময় তাদের হাতে নাতে ধরা হয় এবং ঘটনাস্থল হতে একজন ভিকটিম ও বিভিন্ন ডকুমেন্ট জব্দ করা হয়।

গ্রেফতারকৃত রনি সহ অন্যান্য সূত্রে জানা যায় যে, রনি আন্তর্জাতিক কিডনী ও লিভার পাচারকারী দলের সদস্য। বাংলাদেশে এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা ডালিম। ইন্ডিয়াতে অবস্থান করে শাহিন নামে একজন বাংলাদেশী রনি, আলমদের মাধ্যমে কিডনী ও লিভারের ডোনার সংগ্রহ করে তাদেরকে ইন্ডিয়াতে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করে। এক্ষেত্রে ডোনারদের তারা ৪,০০,০০০ টাকা থেকে ৪,৫০,০০০ টাকা দিয়ে থাকে। ইন্ডিয়ায় ডোনারদের সাথে রোগীদের রক্ত, কিডনী ও লিভার  ক্রস ম্যাস করিয়ে থাকেন শুধু কিডনীর ও লিভার এর জন্য চক্রটি রোগীদের নিকট থেকে নিয়ে থাকেন ১৫-২০ লক্ষ টাকা।

গ্রেফতারকৃত ডালিমের নেতৃত্বে উক্ত চক্রের সদস্যরা প্রথমে কিডনী ডোনেট সেন্টারসহ বিভিন্ন নামে ফেইসবুক পেইজ ওপেন করে থাকে। ঐ পেইজে বিভিন্ন পোস্ট এর মাধ্যমে ডোনারদের নানাভাবে কিডনীও লিভার ডোনেশনের ব্যাপারে প্রলোভন দেখানো হয়। ডোনার পাবার পর ঐ চক্রের সদস্যরাই তাদের পাসপোর্ট ও ইন্ডিয়ান ভিসা লাগানোর ব্যবস্থা করে দেন। অতঃপর ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে তাদের রক্ত, কিডনী ও লিভার পরীক্ষ করানো হয়। রির্পোট ঠিক থাকলে ঐ লোকদেরকে তারা ইন্ডিয়াতে পাচার করে।

ইন্ডিয়ায় অবস্থানরত শাহিন ঐ দেশের হাসপাতালে ভিকটিমদের বিভিন্ন অঙ্গের পূনরায় পরিক্ষা করানোর পর তাদের কাছ থেকে কিডনী ও লিভার সংগ্রহের ব্যবস্থা করে। এই চক্রটি এই পর্যন্ত প্রায় ৩০-৪০ জন লোককে প্রলুব্ধ করে অবৈধভাবে কিডনী ও লিভার দেবার জন্য ইন্ডিয়া পাচার করেছে। তারা আরো কয়েকজনকে একই উদ্দেশ্যে ইন্ডিয়ায় পাচারের প্রক্রিয়া চালানোকালে একজন ভিকটিম ও ডকুমেন্টসহ র‌্যাব তাদের হাতেনাতে ধৃত করে। আন্তর্জাতিক কিডনী ও অন্যান্য প্রাচারকারী গ্রেফতারকৃত উক্ত আসামীরা উল্লেখিত ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অকপটে স্বীকার করে।

মানাবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ অনুযায়ী কারো অঙ্গহানী করা বা বিকলাঙ্গ করা গুরুতর অপরাধ জানা সত্বেও উক্ত সংঘবদ্ধ পাচারকারী দলটি দীর্ঘদিন যাবৎ নির্বিঘ্নে এইরুপ কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছিল।

কিডনী/লিভার প্রদানের পর কিডনী/লিভারদাতা পরবর্তীতে অসুস্থ হয়ে গেলেও পাচারকারী দলটি তাদের ন্যূনতম সাহায্য ও সহযোগীতা করত না। কিডনী প্রদানের পর কেউ কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেনে বা মৃত্যেুর কোলে ঢলে পড়েছেন এমনও নজির রয়েছে।

উক্ত ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের ৬/৭/৮/১১ ধারায় নিয়মিত মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

চট্টগ্রামে কিডনী ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচারের মূলহোতাসহ গ্রেফতারদেশী টুয়েন্টিফোর
Comments (0)
Add Comment