জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে ক্ষতিগ্রস্ত হন রফতানিকারকরা। তখন অনেকেরই রফতানি আদেশ বাতিল হয়ে যায়। অনেক আদেশ স্থগিত হয়। আবার রফতানির জন্য পণ্য বিদেশে পাঠানো হলেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে রফতানি বিল আর দেশে আসেনি। ক্ষতিগ্রস্ত রফতানিকারকদের সক্ষমতা ধরে রাখতে আর্থিক সহায়তার জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ২০২০ সালের ২০ আগস্ট পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ তহবিল ব্যবহারের একটি নীতিমালা দেয়া হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। এ তহবিল থেকে ঋণ পেতে প্রথমে সুদহার ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে তা আরেক দফা কমিয়ে ৫ শতাংশ পুনর্নির্ধারণ করা হয়।
শুরু থেকেই এ তহবিল ব্যবহারে জটিলতার অভিযোগ তুলে আসছেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে তারা এ তহবিল ব্যবহার করতে পারছেন না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, তারা শুরু থেকেই এ তহবিল ব্যবহারের জটিলতার কথা বলে আসছেন। এ তহবিল করা হয়, ব্যবসায়ী অর্থের অভাবে রফতানি পণ্য প্রস্তুত করতে যেন অসুবিধা না হয় সে জন্য আর্থিক সহায়তা করার জন্য। রফতানি পণ্য জাহাজীকরণের আগে এ তহবিল ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। কারণ অনেক সময় রফতানিকারকরা অর্থের অভাবে পণ্য প্রস্তুত করতে সমস্যা হয়। এ কারণে বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা যাতে সহজেই পণ্য প্রস্তুত করতে পারেন এ কারণে ওয়াকিং ক্যাপিটাল হিসেবে সহায়তা করতে এ তহবিল গঠন করা হয়। কিন্তু অর্থব্যবহারের নীতিমালায় বলা হয়, এ তহবিল পেতে পণ্য জাহাজে তোলার ছাড়পত্র ব্যাংকে জমা দিতে হবে। তিনি প্রশ্ন করেন, যদি ব্যবসায়ীরা পণ্য জাহাজীকরণ করতে পারেন তা হলে এ তহবিল কেন ব্যবহার করবেন। বিষয়টি বারবার আমরা বলে আসছি। কিন্তু এর কোনো সমাধান হয়নি। তিনি বলেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে এ তহবিল গঠন করা হয়েছিল। এখন দেশের রফতানি আয় বাড়াতে রফতানির অন্য খাতে এ তহবিল ব্যবহার করা প্রয়োজন।
তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত দুই বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিলের মধ্যে ৬০০ কোটি টাকার বেশি ব্যবহার হয়নি। কারণ ব্যবসায়ীদের বিকল্প একাধিক উৎস রয়েছে। যেমন- রফতানি উন্নয়ন তহবিল, বিভিন্ন প্রণোদনা কর্মসূচি ইত্যাদি। এ কারণে ব্যবসায়ীদের এ তহবিল ব্যবহারের তেমন প্রয়োজন পড়েনি। তবে তহবিলের এত কম ব্যবহার হওয়ার কারণ জানতে চেয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। একই সাথে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে কোনো এ তহবিল ছাড়ে কোনো গাফিলতি আছে কি না, তা তদারকি করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদ্যমান সুদহার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ করারও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে শিগগিরই উদ্যোগ নেয়া হবে।