চট্টগ্রামে চুয়ান্ন মার্কেট-বস্তি অগ্নিঝুঁকিতে

ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনে আকাশে ফানুস উড়ান কয়েকজন যুবক। হঠাৎ একটি ফানুস টেরিবাজারের বক্সিরহাটে মুড়ির দোকানে গিয়ে পড়ে। মুহূর্তেই ধরে যায় আগুন। সেই আগুনে পুড়ে ছাই হয় একে একে ৭টি দোকান। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে এই মার্কেটের নাম।

শুধু টেরিবাজার নয়- ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় এরকম অগ্নিঝুঁকিতে আছে চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার চুয়ান্নটি মার্কেট ও বস্তি। ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এসব মার্কেট ও বস্তিতে ছোট আগুন ধরলেও বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বড় অগ্নিকা- হলে ব্যাপক প্রাণহানির শঙ্কাও করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।

অগ্নিঝুঁকিতে যেসব মার্কেট-বস্তি:

কালুরঘাট ফায়ার স্টেশনের অধীনে হক মার্কেট, স্বজন সুপার মার্কেট, বখতেয়ার সুপার মার্কেট, নজু মিয়া হাট মার্কেট, বলির হাট মার্কেট। লামার বাজার স্টেশনের অধীনে ভেড়া মার্কেট, চাল পট্টি, শুঁটকি পট্টি, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, মিয়া খান পুরাতন জুট মার্কেট, ওমর আলী মার্কেট। বন্দর ফায়ার স্টেশনের অধীনে পোর্ট মার্কেট, বড় পুল বাজার, ইসা মিস্ত্রি মার্কেট, ফকির হাট মার্কেট, নয়া বাজার মার্কেট, ফইল্লাতলি বাজার ঝুঁকিতে রয়েছে।

ইপিজেড ফায়ার স্টেশনের অধীনে চৌধুরী মার্কেট, কলসি দিঘির পাড় কলোনি, আকমল আলী কলোনি, মহাজন টাওয়ার, রেলওয়ে বস্তি। চন্দনপুরা ফায়ার স্টেশনের অধীনে চকভিউ সুপার মার্কেট, কেয়ারি শপিং মল, গুলজার মার্কেট, আলী মার্কেট, মতি টাওয়ার, শাহেন শাহ মার্কেট। নন্দনকানন ফায়ার স্টেশনের অধীনে রিয়াজ উদ্দিন বাজার, জহুর মার্কেট, টেরিবাজার, তামাকুমণ্ডি লেন, গোলাম রসুল মার্কেট, বাগদাদ ইলেক্ট্রিক সুপার মার্কেট, হাজী সরু মিয়া মার্কেট, নুপুর মার্কেট ঝুঁকিতে রয়েছে।

আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের অধীনে ঝাউতলা বস্তি, আমবাগান বস্তি, সেগুনবাগান বস্তি, কদমতলী রেলওয়ে বস্তি, সিঙ্গাপুর সমবায় মার্কেট, কর্ণফুলী মার্কেট। বায়েজিদ ফায়ার স্টেশনের অধীনে ২ নম্বর গেট এলাকার রেলওয়ে বস্তি, অক্সিজেন এলাকার রেলওয়ে বস্তি, বার্মা কলোনি, ২ নম্বর গেট ড্রাইভার কলোনি, রৌফাবাদ কলোনি, শেরশাহ কলোনি, শেখ ফরিদ মার্কেট, যমুনা সুপার মার্কেট, ষোলশহর সুপার মার্কেট, ইমাম শপিং কমপ্লেক্স, চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্স ঝুঁকিতে রয়েছে।

সক্ষমতা বাড়লেও সুফল কম:

ফায়ার সার্ভিসে যন্ত্রপাতির সংকট কমেছে। গত এক দশকে একাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিসের বহরে যুক্ত হয়েছে নানা যন্ত্রপাতি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন- অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়ানো হলেও এর সুফল মিলছে কম। কারণ হিসেবে অপরিকল্পিত নগরায়ন, পানির সংকট, হাইড্রেন্ট সিস্টেমের অভাব, যানজট, রাস্তার অপ্রতুলতাসহ নানা সমস্যার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রামে ফায়ার সার্ভিসের ৩০ ধরনের বেশি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ সংযোজন করা হয়েছে- কোল্ড কাট সিস্টেম ভিহিকল, মেগিরাজ পাম্প, ব্রিদিং এপারেটরস টেন্ডারসহ নানা অত্যাধুনিক যন্ত্র। এছাড়া টোয়িং ভিহিকল, এক্সভেটর উইথ ডিমোলেশন হ্যামার, ফায়ার এন্ড রেসকিউ টেন্ডার, ওয়াটার মিস্ট, গ্রাউন্ড মনিটর, ইমার্জেন্সি টেন্ডার, ফ্রর্ক লিপটার আছে ফায়ার সার্ভিসের কাছে। যা দিয়ে দ্রুত আগুন নেভানো সম্ভব।

দিনে দুইটি আগুন চট্টগ্রামে:

২০২১ সালে চট্টগ্রামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ৬৭০টি। এ হিসেবে শুধুমাত্র চট্টগ্রামেই প্রায় প্রতিদিনই দুইটি করে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত এক বছরে চট্টগ্রামে অগ্নিকা-ে ক্ষতি হয়েছে ৭ কোটি ৪০ লাখ ৮২ হাজার টাকা। তবে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতায় অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচানো গেছে ৪৭ কোটি ১৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার সম্পদ। এ বছর আগুনে দগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন ১৯ জন। নিহত হয়েছেন ৭ জন।

সচেতন না হলে সামনে বিপদ:

ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক নিউটন দাশ বলেন, অগ্নিঝুঁকিতে থাকা অধিকাংশ মার্কেটের গলি সরু। ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এসব এলাকায় যন্ত্রপাতি নিয়ে দ্রুত পৌঁছানোও কঠিন হবে। তাই আমরা তালিকায় থাকা মার্কেটগুলোতে গিয়ে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। সবাই সচেতন না হলে সামনে বিপদ ঘটবে।

চট্টগ্রামে চুয়ান্ন মার্কেট-বস্তি অগ্নিঝুঁকিতেদেশী টুয়ের্ন্টিেফোর
Comments (0)
Add Comment