হাদিসুর রহমানের বাবা আবদুর রাজ্জাক ছেলে হারানোর শোকে পাথর হয়ে গেছেন। হাদিসুরের মরদেহের পাশে বসে আহাজারি করছিলেন আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা রাশিদা বেগম। খানিকটা দূরে নির্বাক বসে আছেন বাবা আবদুর রাজ্জাক। শোকে মুহ্যমান হয়ে আছে বেতাগী উপজেলার কদমতলা গ্রাম।
বড় ভাইকে হারিয়ে বিলাপ করছেন হাদিসুরের দুই ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স ও তারিকুল ইসলাম। তাঁদের আহাজারিতে হাদিসুর রহমানকে শেষবারের মতো একবার দেখতে আসা মানুষও চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না। হাদিসুরের এমন নির্মম মৃত্যু কিছুতেই যেন মানতে পারছেন না তাঁর স্বজনেরা।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরুর পর অলভিয়া বন্দরে আটকা পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’। সেখানে নোঙর করা অবস্থায় ২ মার্চ জাহাজটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় প্রাণ হারান জাহাজের প্রকৌশলী মো. হাদিসুর রহমান।
মৃত্যুর ১২ দিন পর গতকাল সোমবার দুপুর সোয়া ১২টা ২০ মিনিটে তুর্কি এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে হাদিসুর রহমানের মরদেহ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে। রাত পৌনে ১০টায় হাদিসুরের লাশ তাঁর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। মরদেহ পৌঁছার পর স্বজন, এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া। স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে এলাকার পরিবেশ।
আজ মঙ্গলবার সকালে জানাজার আগে হাদিসুর রহমানের লাশ সামনে রেখে ছোট ভাই গোলাম মাওলা বলেন, ‘আমার ভাই আমাকে আর প্রিন্স বলে ডাকবে না। আমার ভাই খুব ভালো মানুষ ছিল। পরিবারকে একাই আগলে রাখতেন। এখন আর আমাদের কেউ রইল না। আপনারা আমার ভাইকে ক্ষমা করবেন।’
এ সময় হাদিসুরের বাবা আবদুর রাজ্জাক ও মা রাশিদা বেগম নির্বাক ছিলেন। প্রতিবেশী ও স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। আজ বাড়ির পাশের মাঠে জানাজা শেষে সকাল সাড়ে ১০টায় মসজিদসংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে দাদা-দাদির কবরের পাশে হাদিসুরকে দাফন করা হয়।