খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের তিনজন শিক্ষার্থীর পৃথক তিনটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি খুবিতে অনুষ্ঠিত পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গবেষণাগুলো উপস্থাপন করেন তারা।
গবেষণায় দেখা গেছে, সমন্বিত চাষাবাদ ব্যবস্থাপনায় অতিমাত্রায় সার ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে সবজিতে ঢুকে পড়ছে এসব ধাতু। ট্যানারি বর্জ্য দিয়ে তৈরি ফিশ ফিড ব্যবহারের কারণে মাছেও মিলেছে ভারী ধাতু। শুধু মাছ এবং সবজি নয়, চিংড়ি ঘেরের মাটি ও পানিতেও মিশ্রণ ঘটেছে এসব ধাতুর।
খুলনার ডুমুরিয়ায় টমেটো, শিম ও বেগুন—এ তিন সবজি নিয়ে গবেষণা করেন খুবির পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের ছাত্রী রওনক জাহান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘কৃষকরা সবজি চাষের জন্য ক্ষেতে যেসব সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেন, সেগুলোর বেশিরভাগই ইনঅর্গানিক। এ কারণে টমেটো, শিম ও বেগুনে অতিমাত্রায় ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, আর্সেনিক ও সিসা পাওয়া গেছে।’
সাতক্ষীরায় বাগদা ও গলদা চিংড়ি এবং তেলাপিয়া মাছ নিয়ে গবেষণা করেছেন একই ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সজীব রায়। তিনি আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলার তিনটি ঘের থেকে নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণা করেন। তার গবেষণায় এ দুটি মাছে মিলেছে অতিমাত্রায় আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, ক্রোমিয়াম ও আর্সেনিক।
সাতক্ষীরার দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলায় চিংড়ি ঘেরের পানি ও পলিমাটি নিয়ে গবেষণা করেন একই ডিসিপ্লিনেরই মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নাসের মুস্তফা। তিনি ছয়টি ঘের থেকে পানি ও পলিমাটির ১২টি নমুনা সংগ্রহ করে এ গবেষণা চালান। তার গবেষণায় পানি ও মাটিতে অতিমাত্রার ক্যাডমিয়াম, জিঙ্ক ও সিসার উপস্থিতি শনাক্ত করা গেছে। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) নীতিমালা অনুযায়ী সহনীয় মাত্রার চেয়ে তিন থেকে চারগুণ বেশি। ট্যানারি বর্জ্য দিয়ে তৈরি ফিশ ফিড ব্যবহারের কারণে এই মাছ এবং জমিতে এসব ভারী ধাতু পাওয়া গেছে বলে জানান গবেষকরা।
গবেষণা তিনটি পরিচালনা করা হয় পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন প্রধান অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে। তিনি জানান, গবেষণায় সবজি, গলদা ও বাগদা চিংড়ি, তেলাপিয়া মাছ এবং চিংড়ি ঘেরের পলিমাটি ও পানিতে শিক্ষার্থীরা যে মাত্রার ভারী ধাতু পেয়েছে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সর্বোচ্চ অনুমোদিত সীমার চেয়ে বেশি।
তিনি আরও বলেন, ‘এই ভারী ধাতুর ক্ষতির প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। তাৎক্ষণিকভাবে শারীরিক কোনো বিপর্যয় না ঘটলেও এটি পর্যায়ক্রমে মানুষের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি করছে।’
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহামুদুর রহমানের ভাষ্যমতে, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, সিসা ও আর্সেনিক মানুষের শরীরে ঢুকলে তা বের হতে পারে না। সবকটিই দীর্ঘমেয়াদে কিডনি, লিভার ও মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এছাড়া ক্যানসারসহ নানা ধরনের ক্রনিক রোগের বড় উৎস হচ্ছে এসব রাসায়নিক।
গবেষকরা বলছেন, এ তিনটি বিষয়ের ওপরে আরও বিস্তারিত গবেষণার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।