কিন্তু চেকটি আর ভাঙাননি তিনি। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে পাঠানো জাতির জনক স্বাক্ষরিত চেক আজও পরম যত্নে আগলে রেখেছে সুরাইয়া খাতুন ও তাঁর পরিবার।
পরিবার ও ঝিনাইদহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের প্রত্যয়ন সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতাপূর্ব বিভিন্ন গণ-আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন কোবাদ আলী। ১৯৭১ সালে নিজ এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। এক পর্যায়ে প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে যান। ওই বছর ডিসেম্বরের শুরুর দিকে দেশে ফিরে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। স্বাধীনতার পর তিনি বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। শৈলকুপা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর উপপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ১৯৭৪ সালের ৮ ডিসেম্বর রাতে উপজেলার কচুয়া বাজার এলাকায় আততায়ীরা গুলি চালিয়ে হত্যা করে তাঁকে। তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৭৫ সালের ২৮ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে দুই হাজার টাকার একটি চেক পাঠান ডাকযোগে।
শেখ কোবাদ হোসেনের ছয় সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অর্থ ও হিসাব শাখার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার বাবার অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে বঙ্গবন্ধু আমার মায়ের নামে চেকটি প্রদান করেন। মা আমাদের ছয় ভাই-বোনকে অনেক কষ্টে মানুষ করেছেন। ওই সময় চেকটির মূল্যমান অনেক হলেও বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তিনি চেকটি না ভাঙিয়ে যত্ন করে রেখে দেন। বাঁধাই করে সংরক্ষণে রাখা চেকটি আমাদের কাছে পারিবারিক সম্পদে পরিণত হয়েছে। অনেক সংস্থা থেকে চেকটি চেয়েছিল; কিন্তু আমরা দিইনি। ’
চেকের স্বত্বাধিকারী সুরাইয়া খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী মুক্তিবাহিনীর সদস্য ছিলেন। ছোট ছেলে গর্ভে থাকা অবস্থায় তাঁকে গুলি করা হয়। তখন বঙ্গবন্ধু আমাকে এই চেক দেন। আমি চেকটি ভাঙাইনি, ছেলেদেরও ভাঙাতে দিইনি। এখন আমার বয়স হয়েছে, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে চেকটি তুলে দিতে চাই। এর বিনিময়ে আমি কিছুই চাই না। ’