অনলাইন ডেস্কঃ
আগামী বছরের ১ জানুয়ারি বই উৎসব নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু সম্ভব নয়। কিন্তু বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, আগামী বছর ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ কাগজ সংকটের থমকে আছে বিনামূল্যের বই ছাপার কাজ।
সমিতির নেতারা বলছেন, ‘কাগজের সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এখনই ৫০ ভাগ কাগজ শুল্কমুক্ত আমদানি না করলে ১ জানুয়ারি বই দেওয়া সম্ভব হবে না।’
তবে ওউ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ডিসেম্বরের মধ্যেই পাঠ্যবই চেয়েছেন প্রকাশকদের কাছে।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চের কাজী বশির মিলনায়তনে সমিতির ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির নেতারা এই সংকটের কথা তুলে ধরেন। বার্ষিক সাধারণ সভায় সমিতির পরিচালক এবং ৬৪ জেলা ও উপজেলাগুলোর পুস্তক ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ছোটনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ-সভাপতি কায়সার-ই-আলম, মির্জা আলী আশরাফ কাশেম, ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান, মাজহারুল ইসলাম ও সাবেক সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন। প্রকাশনা শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভাবনা তুলে ধরেন শ্যামল পাল।
সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন বলেন, দুঃখের কথা বলার জন্য আমরা কারও কাছে যেতে পারি না। আমাদের কিছু পুস্তক প্রকাশনী আছে, যারা ডোনেশনের মাধ্যমে এই শিল্পকে ধ্বংস করতে চায়। আমরা আপনাদের সহায়তায় এসব প্রকাশনীকে কালো তালিকাভুক্ত করতে চাই।
সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, কাগজ সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আগামী বছরের জন্য বিনামূল্যে বই ছাপাতে যে পরিমাণে কাগজ প্রয়োজন তার ৫০ শতাংশ কাগজ শুল্কমূক্ত আমদানি না করলে ১ জানুয়ারি বই উৎসবে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি।
বাপুসের উপদেষ্টা ওসমান গণি বলেন, সমিতির ২৬ হাজার সদস্য শুধু পুস্তক ব্যবসায়ী নন, তারা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে কাজ করেন। এনসিটিবি কখনই বই ছাপানোর বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে সঠিক কথা বলে না। এই শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তারা কোনো প্রণোদনা পাননি, কোনো সহযোগিতা পাননি। করোনায় তারা অনেক কষ্ট করেছেন। আমরা সরকারের পক্ষের শক্তি। প্রতিটি স্কুলে পাঠাগার যেন সচল থাকে, সেই আহ্বানও জানান তিনি।
পুস্তক বাধাই কমিটির সভাপতি মাহবুবুল আলম মল্লিক বলেন, ‘কারোনা মহামারিতে এই শিল্প অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘বইয়ের সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছেন তারা শিক্ষা পরিবারের সদস্য। প্রধানমন্ত্রী নিজেও একজন সুলেখক, সম্পাদক ও পাঠক। তার সময়ে প্রকাশনা শিল্প খারাপ অবস্থায় থাকবে সেটি হতে পারে না। বিশ্ব একটি কষ্টকর সময়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। তারপরও মুদ্রণ শিল্পের যা যা সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে।’
তিনি বলেন, ‘১ জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। কাগজের সংকট নিয়ে মিলমালিকদের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। তারা আমাকে কথা দিয়েছেন কাগজ সংকট হবে না। বই আমাদের লাগবে পহেলা জানুয়ারিতে, এতে কোনো ছাড় নেই। মিলমালিকরা যদি তাদের ওয়াদা ভঙ্গ করেন তবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। বিদেশ থেকে আমদানির বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতিও দেন শিক্ষামন্ত্রী।’
প্রশাসকদের বিভিন্ন প্রস্তাবনার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এনসিটিবি’র (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড) বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পুস্তক প্রকাশনা সংক্রান্ত সেখানে আপনাদের প্রতিনিধিত্বের কথা বলেছেন সেটি অত্যন্ত ভালো প্রস্তাব। আমি তো বললাম আমি আপনাদের সব সুপারিশের সঙ্গে একমত। গণি ভাই বলেছেন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গেলে মন্ত্রীর কথায় খুশি হয়ে ফিরে আসি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। আশা করি সেই মন্ত্রী আমি না। কিন্তু আমি যখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলব তখন অখুশি করার কথা তো বলতে চাই না। আপনারা খুশি হন তেমন কথাই বলতে চাই। তবে আমি নিজেকে যতটুকু জানি সেটুকু বলতে পারি আমি সত্যটুকু বলবার চেষ্টা করি। তাতে আপনি যদি অখুশি হন তাতে আমার কিছু করার নেই। আমি সত্যটা আমি বলব। আর আপনাকে খুশি করবার জন্য অর্থাৎ আপনার শিল্পটা ভালো হলেই তো আপনি খুশি হবেন! সেই ভালোটা করবার জন্য আমার যা সাধ্যে আছে, আমি তার সবটুকু করতে রাজি আছি এবং করব। কাগজের মূল্য বৃদ্ধি রোধ করার কথা বলেছেন এটা সত্যি, কিন্তু আমার মন্ত্রণালয় সরাসরি জড়িত নয়। যদি সমস্যা হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হবো আমরা, কারণ সবচেয়ে বড় গ্রাহক আমার মন্ত্রণালয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলব। পাঠাগার সারাদেশে চালু করার জন্য বারবার তাগাদা দিচ্ছি। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটালি কানেক্ট করার চেষ্টা করছি। যাতে আমরা এক জায়গায় বসে যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে (প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম) নিয়মিত দেখতে পাই।
ডিজিটাল হলে আমি পাঠাগারও দেখতে পাব। পাঠাগার নামে কোথাও একটি আলমারি আছে, কোথাও একটা ঘর আছে। এগুলোতে তালা মারা থাকে, ভেতরে ধুলাবালি পড়ে আছে তেমন যেনও না হয়। পাঠাগারের কাজটি ঠিকমতো হওয়া প্রয়োজন। লাইব্রেরিয়ান পদটিকে শিক্ষকের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।