অনলাইন ডেস্ক:
চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের বাংলা প্রথমপত্রের সৃজনশীল প্রশ্নের একটি অনুচ্ছেদে সাম্প্রদায়িক উস্কানির সাথে যশোর শিক্ষাবোর্ডের চার মডারেটরের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠার পর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। তিন সদস্যের এই তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে যশোর শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কে এম রব্বানীকে। অপর দু’ সদস্য হচ্ছেন বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম ও উপ-কলেজ পরিদর্শক মদন মোহন দাস। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কমিটিকে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রণীত বাংলা প্রথমপত্রের ব্যাপক সমালোচিত সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক প্রশ্নপত্রটি তৈরি করেছেন যশোর বোর্ডের শিক্ষকরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে যশোর বোর্ডের পরীক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক প্রশ্নপত্রটি তৈরি এবং মডারেশনের সাথে যারা জড়িত তারা সকলেই যশোর বোর্ডের শিক্ষক।
একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক প্রশ্নপত্রটি যে সেটার তৈরি করেছেন তিনি হচ্ছেন ঝিনাইদহের মহেশপুরের ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল। তার তৈরী বাংলা প্রথমপত্রের বিতর্কিত ওই প্রশ্নপত্রটি মডারেশন করেছেন চারজন মডারেটর। এই চার মডারেটর হচ্ছেন নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দিন শাওন, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শফিকুর রহমান, নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল করিম।
প্রশ্নপত্রে যে অনুচ্ছেদটি লেখা হয়েছে তা হচ্ছে, ‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। শেষমেষ ভাইকে শাস্তি দিতে আবদুল নামের এক মুসলমানের কাছে তার ভাগের জমি বেঁচে দেয় নেপাল। আবদুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। ঈদুল আজহার সময় সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কুরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।’
পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর বিতর্কিত অনুচ্ছেদটি অনেকের নজরে আসে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে তীব্র সমালোচনা হয়। বহু মানুষ এ ঘটনায় ধিক্কার জানান। তারা ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন।
যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র জানিয়েছেন, প্রশ্নপত্র তৈরিতে কর্মকর্তাদের সামান্যতম কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এমনকি তারা কেউই প্রশ্নপত্র দেখতে পারেন না। এ কারণে সংযোজন, বিয়োজন তাদের এখতিয়ারের বাইরে।
তিনি বলেন, প্রথমে সেটাররা প্রশ্নপত্র তৈরি করার পর খামবদ্ধ করে মডারেটরদের কাছে পাঠান। মডারেটররা ওই প্রশ্নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে সংযোজন, বিয়োজন এমনকি বাতিল করার ক্ষমতা রাখেন। তারা সেটি করে ফের খামবদ্ধ করে শিক্ষাবোর্ডে জমা দেন। শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা কেবলমাত্র খামবদ্ধ প্রশ্নপত্র বিজি প্রেসে পাঠিয়ে দেন। আর সেখানেই ছাপার কাজ হয়। এ কারণে ভুল হোক আর সঠিক হোক বোর্ডের কারোর কিছুই করার থাকে না। এখানকার শিক্ষকরা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করায় চরম বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন যশোর বোর্ডের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, মঙ্গলবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে প্রাথমিকভাবে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক যশোর শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কেএম রব্বানী বলেন, গতকাল পর্যন্ত কোনো চিঠি পাইনি। চিঠি পাওয়ার পর কার্যক্রম শুরু করা হবে।
যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আহসান হাবীব বলেন, এ ধরনের ঘটনার জন্য তারা দুঃখিত, বিব্রত। যারা এ কাজ করেছে তারা তাদের চেতনার পরিপন্থি। তারা সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়েছে। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে।
উল্লেখ্য, পরীক্ষা বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যশোর বোর্ডের ইতিহাসে এ ধরনের বিব্রতকর ঘটনা এটিই প্রথম। এর আগে কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি তার।