অনলাইন ডেস্ক:
শান্তির ধর্ম ইসলামের মর্মবাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে সমাজ থেকে অন্ধকার, অশিক্ষা, বিভেদ, সহিংসতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের পাশাপাশি ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী অপশক্তিকে প্রতিহত করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আসুন আমরা সবাই ইসলামের বাণীকে হৃদয়ে ধারণ করি এবং সমাজ থেকে অন্ধকার, অশিক্ষা, বিভেদ, সহিংসতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করি। যে অপশক্তি ইসলামের অপব্যাখ্যা করছে তাদের প্রতিহত করুন।’
বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা সম্মেলন-২০২২ এবং হজ ও ওমরাহ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগদান করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ইসলামের জন্য অনেক কাজ করেছেন এবং তার উত্তরসূরী হিসেবে সরকার ইসলাম ও জনগণের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ইসলাম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধর্ম। কিন্তু কিছু সন্ত্রাসীর কারণে এই পবিত্র ধর্ম সমালোচনার সম্মুখীন।
তিনি বলেন, দেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত রেখে পবিত্র ইসলামের শান্তিপূর্ণ গৌরব সমুন্নত রাখতে আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ এবং আলেম-ওলামাদেরকে সম্পৃক্ত করেছি। মানবসম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে সম্পৃক্ত করে মসজিদের ইমামগণকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমরা মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় লাখ লাখ শিশুকে কুরআন শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সাথে সাথেই আমরা ৬৪৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা দিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্প পুনরায় চালু করি। বর্তমানে এ প্রকল্পের বরাদ্দ ২ হাজার ২৭২ কোটি ৪ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি করে মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি।
হজযাত্রীদের সাথে কোনো প্রতারণা বা হয়রানি করলে এজেন্সিগুলোকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হজযাত্রীদের সাথে কোনো এজেন্সি প্রতারণা বা হয়রানি করলে সে এজেন্সির বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতেও আল্লাহর ঘরের মেহমানদের যারা হয়রানি করবে তাদেরকে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। এটা মনে রাখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১ এবং হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২২ প্রণয়ন করেছি। এর ফলে হজ কার্যক্রমে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগের প্রতিকার হয়েছে।
আগামীতে যারা হজে যাবেন তাদের হজের পাশাপাশি সৌদি আরবের সমস্ত নিয়ম-কানুন এবং আইন সম্পর্কে জানা এবং মেনে চলার আহ্বান জানান সরকার প্রধান।
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনের আগে দেয়া বেতার ভাষণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ উদ্ধৃত করেন। জাতির পিতা বলেছিলেন,‘আমরা ইনসাফের ইসলামে বিশ্বাসী। আমাদের ইসলাম হজরত নবী করীম সা:-এর ইসলাম, যে ইসলাম জগতবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র।’
হজযাত্রীদের হজ-সম্পর্কিত যথাযথ তথ্য সরবরাহ, তাদের বর্তমান প্রযুক্তি-ভিত্তিক হজ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতন, হজ এজেন্সির সাথে সরাসরি যোগাযোগ এবং মধ্যস্বত্বভোগী ও প্রতারকদের প্রভাব হ্রাস করতে জাতীয় পর্যায়ের হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা সম্মেলন-২০২২ এবং হজ ও ওমরাহ মেলার এই আয়োজন।
সম্মেলনে ‘হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা: অর্জন ও কর্মকান্ড’ এবং ‘ই-হজ ব্যবস্থাপনা এবং মক্কা উদ্যোগের রুট’ বিষয়ে দুটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
বিভিন্ন হজ ও আর্থিক সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তিন দিনব্যাপী হজ ও ওমরাহ মেলায় প্রায় ১৫০টি স্টল এবং প্যাভিলিয়ন স্থাপন করেছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হজযাত্রীদের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে।
বাংলাদেশ বিশ্বের ৪র্থ বৃহত্তম হজযাত্রী প্রেরণকারী দেশ। বাংলাদেশের ৯০ শতাংশের বেশি হজযাত্রী এবং শতভাগ ওমরাহযাত্রী বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরবে যান।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো: ফরিদুল হক খান, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান, বাংলাদেশে সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসুফ আল-দাহিলান এবং হাব সভাপতি মো: শাহাদাত হোসেন তসলিমও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।