রাত সাড়ে বারোটা। সব নিরব, একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার। কোথেকে একটা জোনাকি পোকা এসে তানিমের গায়ে বসলো। নিশাত হাত বাড়ালো ওটাকে ধরার জন্য। অনুভুতিটা তানিমের জন্য চমৎকার। বাসের পেছনদিকে একজন বৃদ্ধলোক বসে আছে। তাকে দেখার জন্য পেছনে ফিরে তাকাতেই তানিম দেখলো পুরো বাস জুড়ে জোনাকি পোকার মিছিল। পাশে বসা মেয়েটির হাতে টোকা দিয়ে তাকে দেখতে বললো…
– পেছনে দেখেন একবার
– সুন্দর তো !
– আরো জোনাকি লাগবে?
– এনে দিবেন নাকি?
– না
– কেনো?
– চলেন ওদের বৃষ্টিতে ভিজি।
জোনাকি পোকার মিছিল দেখতে দুজনে একসাথে বাসের পেছন দিকে চলে গেলো। বৃদ্ধ লোকটার একটু পিছে গিয়ে বসলো। বাস বেশ জোরেসোরেই চলছে। মানবজাতির আগমণে জোনাকি পোকাগুলো বিরক্ত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। সবগুলো একসাথে আস্তে আস্তে সামনের দিকে চলে যাচ্ছে। এরা বোধহয় মানুষ পছন্দ করে না…
বাসেই পরিচয় হয়েছে নিশাত আর তানিমের। কথা বেশি হয়নি। স্বভাবতই তানিম একটু নীরব প্রকৃতির ছেলে। আর নিশাতও খুব চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে।
– আচ্ছা জোনাকি পোকার ইংরেজি কি?
– লাইটিং বাগ
– কি বলেন ! আমি তো জানি ফায়ারফ্লাই।
– তাই! আমি বুঝিনি, আপনি প্রশ্ন করেছিলেন।
– মানে?
– মানে আমি ভেবেছিলাম আপনি জোনাকি পোকার ইংরেজিটা জানেন না।
নিশাত মুচকি হাসলো। এত অন্ধকারের মধ্যেও সে হাসিটা চোখে পড়েছে তানিমের। জোনাকিগুলো মিছিল করতে করতে আবার তাদের কাছে এসেছে। তানিমের মনে হচ্ছে সে নিশাতের প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তাই সে জোনাকির মিছিল ভেদ করে ড্রাইভারের পাশে গিয়ে বসলো। একটা সিগারেট ধরিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখতে পেলো, জোনাকি পোকাদের সাথে খেলছে নিশাত। এতক্ষণ ধরে তার পাশে বসে থাকা ছেলেটির কথা হয়ত আর মনে নেই…
নিশ্চিন্ত হলো তানিম। সিগারেটের দিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। কখনো কখনো মন খারাপের অনুভূতিগুলোতেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে হয়। সত্যিই অদ্ভুত !
Tags : Phayaraphlai Express