অনলাইন ডেস্ক:
ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী আঁখি অস্ত্রোপচার ছাড়া সন্তানের জন্ম দেয়ার আশায় গিয়েছিলেন ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে। কিন্তু ভুল চিকিৎসায় সদ্যোজাত সন্তান মারা যাওয়ার সাত দিনের মাথায় মারা গেলেছেন মা মাহবুবা রহমান আঁখি। রোববার (১৮ জুন) রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে দুপুর ২টার পর তার মৃত্যু হয়।
আঁখির মৃত্যুতে মায়ের আহাজারি থামছেই না। বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন মা নুরজাহান বেগম। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আঁখিকে এনে দাও। আমি কি নিয়ে বাঁচবো। আমি আর কিছুই চাই না। আমার সন্তান পৃথিবীতে নেই। আমি আমার আঁখিকে চাই। আঁখির মৃত্যুর জন্য দোষীদের ফাঁসি চাই।
আঁখির মৃত্যুর পর তার চাচাতো ভাই চ্যানেল24 কে বলেন, যারা ভুল চিকিৎসা করে বোনটাকে মেরে ফেলল তাদের বিচার তো চাইছি এবং চাইব সামনেও। বোনের ছেলেটা তো আগেই মারা গেল। আসলে এর চেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না। সবচাইতে বড় ট্রাজেডি হলো যেহেতু ও আমার বোন, একমাত্র বোন।
তিনি আরও বলেন, ওর বাবা একজন পুলিশ অফিসার। তিনি ১৯৯৯ সালে পান্থপথে ডিউটিরত অবস্থায় মারা যান। মারা যাওয়ার সময় একমাত্র বেবি হিসেবে তাকে রেখে যায়। চাচি আর বিয়ে করেনি। সে অবস্থায় তাকে লালন-পালন করে আমাদের সঙ্গে যৌথ পরিবারে বড় হয়েছে। এই হলো আমার ট্রাজেডির বোন।
কুমিল্লার মাহবুবা রহমান আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে গত ৯ জুন সি-সেকশন সার্জারির সময় নবজাতকের মৃত্যু হয় এবং মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। এরপর আঁখি ১১ জুন থেকে বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা ও মিথ্যাচারের অভিযোগ এনে গত ১৪ জুন ধানমন্ডি থানায় মামলা দায়ের করেন।
অভিযোগে বলা হয়, রোগী ও তার পরিবারকে সার্জারির আগে বলা হয়েছিল যে সংযুক্তা সাহা আঁখির অপারেশন করবেন। তবে হাসপাতালে তাকে ওই চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি করা হলেও ডা. সংযুক্তা সাহা দেশেই ছিলেন না। অন্য চিকিৎসকের মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা ব্যর্থ হলে তখন অস্ত্রোপচার করে বাচ্চা বের করা হয়। পরদিন মারা যায় শিশুটি। এ ঘটনায় ঢাকার একটি আদালত হাসপাতালটির দুই চিকিৎসককে কারাগারে পাঠিয়েছে। তবে মূল অভিযুক্তকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এদিকে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালের সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও অস্ত্রোপচারের কক্ষ মানসম্পন্ন নয় বলে অধিদপ্তর এ নির্দেশ দিয়েছে।