অনলাইন ডেস্ক:
একদিনের ব্যবধানে ভেঙে গেছে বিশ্বে ‘সবচেয়ে গরম’ দিনের রেকর্ড। গত সোমবার (৩ জুলাই) গড় তাপমাত্রার হিসেবে ইতিহাসে সবচেয়ে ‘গরম দিন’ ছিল। এদিন বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। মঙ্গলবার (৪ জুলাই) বিশ্বের তাপমাত্রা আরও বেড়ে যায়। এদিন গড় তাপমাত্রা ১৭ দশমিক ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে। যা আগের দিনের তুলনায় শূন্য দশমিক ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থা ন্যাশনাল সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল প্রেডিকশন (এনসিইপি) এ তথ্য বুধবার (৫ জুলাই) জানিয়েছে। খবর যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
যন্ত্রপাতির মাধ্যমে তাপমাত্রার রেকর্ড ধারণ ও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তাপমাত্রা মনিটরিং শুরুর পর সবচেয়ে গরম’ দিনের এই রেকর্ড ভেঙে গেছে মাত্র একদিনের ব্যবধানে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন অস্বাভাবিক তাপমাত্রা সামনে আরও দেখা যেতে পারে। মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তামপাত্রার যে নতুন বিশ্বরেকর্ড হয়েছে, সেটি আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ফের ভেঙে যেতে পারে।
সোমবারের আগে বিশ্বে সবচেয়ে গরম দিনের রেকর্ডটি হয়েছিল— ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে। সে বছর একদিন বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১৬ দশমিক ৯২ সেলসিয়াসে পৌঁছেছিল। এর প্রায় সাত বছর পর আবারও অসহনীয় গরম পড়তে দেখা যাচ্ছে।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা নিশ্চিত করেছে, আবহাওয়ার অস্বাভাবিক অবস্থা এল নিনো আবারও ফিরে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা দিয়েছেন, মনুষ্যকারণে বৃদ্ধি পাওয়া বৈশ্বিক তাপমাত্রা ও এল নিনোর সংমিশ্রণে বিশ্বে সামনে আরও অসহনীয় উষ্ণ দিন দেখা যেতে পারে।
লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের জলবায়ু বিজ্ঞানের প্রভাষক ডক্টর পাওলো সিপ্পি বলেছেন, ‘এল নিনোর প্রভাব এখনো সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়নি এবং উত্তর গোলার্ধে পূর্ণ গ্রীষ্মকাল চলছে। যদি সামনের দিনে আবারও রেকর্ড ভেঙে যায় তাহলে এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।’
জার্মানির লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় বিকিরণের গবেষক ডক্টর কার্স্টেন হোস্টেন, ‘সামনের দিনগুলোতে হয়ত তাপমাত্রা কিছুটা কমবে, কিন্তু যেহেতু বিশ্বে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে জুলাইয়ের শেষে, ফলে গতকালের চেয়ে সামনে আরও বেশি উষ্ণ দিন দেখা যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘সম্ভাবনা আছে, জুলাই ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ হবে…. সঙ্গে সর্বকালের সবচেয়ে উষ্ণ মাস হবে, ‘সর্বকাল’ বলতে এমিয়ান যুগ থেকে, যা এক লাখ ২০ হাজার বছর আগে ছিল।’
গড় তাপমাত্রার এই রেকর্ড উঠে এসেছে ক্লাইমেট রিঅ্যানালাইজার সার্ভিসের তথ্যে। এর তত্ত্বাবধানে রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব মেইন`স ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন্সটিটিউ। এনসিইপি`র ক্লাইমেট ফরকাস্ট সিস্টেমের দেয়া দৈনিক তাপমাত্রার গড় পর্যালোচনা করে প্রতিষ্ঠানটি।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপদাহ অনুভূত হচ্ছে। উত্তর আমেরিকায় আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালিতে ১৯১৩ সালে রেকর্ড করা হয়েছিল৷ আফ্রিকার সবচেয়ে উষ্ণতম তাপমাত্রা ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস- যা ১৯৩১ সালে তিউনিসিয়ার কেবিলিতে রেকর্ড করা হয়েছিল৷ এশিয়ার সবচেয়ে গরমের রেকর্ড ইরানে হয়েছে। এর আগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৫৪ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে ২০১৭ সালে।
১১ আগস্ট, ২০২১ সালে ইতালীয় দ্বীপ সিসিলিতে ইউরোপের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যা ছিল ৪৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২২ সালের ২২ জুলাই যুক্তরাজ্যে সর্বকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
২০২০ সালে, অ্যান্টার্কটিকার সেমুর দ্বীপের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) তথ্য অনুযায়ী, গত ৫০ বছরে অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপে তাপমাত্রা প্রায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।
গত সোমবার (৩ জুলাই) পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়েছে গড় তাপমাত্রা। গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১৭ দশমিক ০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে এই রেকর্ড গড়ে। এর আগের রেকর্ড ছিল ১৬ দশমিক ৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৬ সালের আগস্টের একদিনে এই তাপমাত্রা দেখা গিয়েছিল। এ তথ্য জানিয়েছে ইউএস ন্যাশনাল সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল প্রেডিকশন।