অনলাইন ডেস্ক:
দেশের যোগাযোগের ইতিহাসে একটি মাইলফলক মেট্রোরেল। রাজধানীতে ভোগান্তিহীন যাতায়াতে প্রতিনিয়ত যাত্রী বাড়ছে এতে। সাধারণ যাত্রীদের জন্য সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা এবং এমআরটি পাসধারী যাত্রীদের জন্য রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করছে।
২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর চালু হওয়া মেট্রোরেলে এরইমধ্যে উঠে এসেছে বেশ কিছু অনিয়মের চিত্র। সম্প্রতি মেট্রোরেলের নিয়মিত কয়েকজন যাত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তুলে ধরেছেন এসব অনিয়মের চিত্র।
রোববার (২৩ জুলাই) সাজ্জাদুল ইসলাম সিফাত নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী তার প্রোফাইলে একটি ভিডিও শেয়ার করেন যেখানে দেখা যায় পূর্ণাঙ্গভাবে চালু না হওয়া এই গণপরিবহনে শুরু হয়েছে ভিক্ষাবৃত্তি। ভিডিও পোস্টের ক্যাপশনে লেখা ছিল ‘মেট্রোরেলের প্রথম ভিক্ষুক!’
এরপরেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যা সামাজিক যোগাযোহ মাধ্যমে। অনেকেই ভিডিওটি শেয়ার করে লেখেন, ভিআইপি ভিক্ষুক, ৬০ টাকার টিকিট কেটে মেট্রোরেলে ভিক্ষা করছে।
ভিডিওর বিষয়ে সিফাত গণমাধ্যমকে জানান, ‘আনুমানিক বিকাল পৌনে ৪টায় আমি মিরপুরের পল্লবী স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে উঠি। এ সময় আমার বগিতে একজনকে ভিক্ষা করতে দেখি। তিনি বিভিন্ন জনের কাছে গিয়ে ভিক্ষা চাইছিলেন। এতে অনেক যাত্রী বিব্রতবোধ করছিলেন, অনেকে আবার এটা নিয়ে হাসাহাসিও করেন। লোকটি টিকিট কেটেই ট্রেনে উঠেছিলেন। সবশেষ উত্তরা উত্তর স্টেশনে নেমে আমি একজন আনসার সদস্যকে বিষয়টি অবগত করি। তিনি ওই ভিক্ষুককে আটক করেন। পরে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা বলতে পারি না।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের কোম্পানি সচিব (যুগ্ম সচিব) ও পরিচালক (প্রশাসন) (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, ‘মেট্রোরেলে ভিক্ষাবৃত্তি নিষেধ। কিন্তু সবাই তো টিকিট কেটেই ভেতরে প্রবেশ করে, তারপর যদি মেট্রো ট্রেনে গিয়ে ভিক্ষা করে সেক্ষেত্রে স্টেশনে দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে জানালে সঙ্গে সঙ্গে তারা ব্যবস্থা নেবেন। মেট্রোরেলের প্রত্যেকটা বগিতেই সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে, কেউ বিধি ভঙ্গ করলে শনাক্ত করা যাবে।’
নিয়ম ভঙ্গ করলে শাস্তির বিধান রয়েছে জানিয়ে মেট্রোরেলের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কেউ যদি নিয়ম ভঙ্গ করে, ধরতে পারলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া এসব বিষয়ে দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে মেট্রোরেলের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য আবেদন করেছি। তা পাস হলেই তখন নিয়ম অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া সহজ হবে। আর মেট্রোরেল পুলিশের কাজ তো শুরু হয়ে গেছে। সামনে পুলিশের সংখ্যা আরও বাড়বে।’
তবে এসব বিষয়ে মূলত যাত্রীদেরই সচেতন হতে হবে উল্লেখ করে আব্দুর রউফ বলেন, ‘পুলিশ তো আর ট্রেনের ভেতরে থাকবে না। যাত্রীরাই থাকবেন।’
মেট্রোরেলের কিছু নির্দেশনা:
মেট্রোরেলে চড়তে যাত্রীদের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে কিছু বিষয় আছে যেগুলো মেট্রোরেলে করা যাবে না। এ ছাড়া আরও কিছু নির্দেশনা আছে, যেগুলো মেনে চলতে হবে।
নির্দেশনা অনুযায়ী মেট্রোরেলে পোষা প্রাণী বহন করা যাবে না; বিপজ্জনক বস্তু বহন করা যাবে না; পানের পিক বা থুতু ফেলা যাবে না; প্ল্যাটফর্মে ও ট্রেনে খাবার গ্রহণ করা যাবে না; ময়লা ফেলা যাবে না; উচ্চশব্দে গান বাজানো বা ফোনের স্পিকার ব্যবহার করা যাবে না; ধূমপান করা যাবে না; বড় ও ভারী মালপত্র বহন করা যাবে না, অস্ত্র বহন করা যাবে না।
এছাড়া মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে যেন তারা নিরাপত্তা কর্মীদের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করেন। সেই সঙ্গে প্রয়োজনে সহযাত্রীকেও সহায়তা করেন, মনোযোগ দিয়ে ঘোষণা শোনার জন্য প্রস্তুত থাকেন এবং সর্বক্ষেত্রে ভদ্রতা ও সৌজন্য বজায় রাখেন।