ছুরিকাঘাতে আহত ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল আশঙ্কামুক্ত

সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছুরিকাঘাতে আহত অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন তার  চিকিৎসকরা। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় আনা হয়েছে। ছুরিকাঘাতকারী যুবককে গণ ধোলায়, পরে আটক।

গতকাল ৩ মার্চ শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টার সময় সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) ফেস্টিভ্যালের সমাপনী অনুষ্ঠান চলাকালে পেছন দিক থেকে ছুরি দিয়েঅধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের মাথায় আঘাত করে এক ছাত্র । তিনি গুরুতর আহত হন। সে সময় তিনি পুলিশ পরিবেষ্টিত ছিলেন। তার সাথে থাকা পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা হামলাকারীকে ধরে ফেলে। পরে শিক্ষার্থীরা তাকে গণপিটুনি দেয়। তবে এখনো হামলাকারীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গণ পিটুনির শিকার হামলাকারী

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‌‌মঞ্চের পেছন থেকে এসে এক যুবক ছুরি মারে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশসহ অন্যরা তাকে আটক করে। কী কারণে অধ্যাপক জাফর ইকবালের উপর হামলা হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

হামলাস্থল থেকে উদ্ধার করে আহত এই লেখককে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুল হক জানিয়েছেন, জাফর ইকবালের মাথার তিন জায়গায় ও বাম হাতে আঘাত করা হয়েছে। তাকে ২৭টি সেলাই দিতে হয়েছে। তবে তিনি এখন আশঙ্কামুক্ত। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এয়ার এম্বুলেন্সে যোগে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে আসে হয়েছে।

সিলেটের পুলিশ কমিশনার জানান, এখনো হামলাকারীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হামলার পর তাকে শিক্ষার্থীরা  আটক করে গণপিটুনি দেওয়ায় তারও চিকিৎসা চলছে। খানিকটা সুস্থ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বর্তমানে ওই যুবকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

এদিকে জাফর ইকবালের উপর হামলার ঘটনায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাস ও ঢাকার শাহবাগে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।

শাহবাগে ভিক্ষোভ

অধ্যাপক জাফর ইকবাল বেশ কয়েকবার উগ্রবাদীদের কাছ থেকে হুমকি পেয়েছেন। তার নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরা থাকত। শনিবার পুলিশ প্রহরার মধ্যেই এই হামলা হয়।

উল্লেখ্য গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধনগ্ন করে র্যাগিং করার ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২১জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদের সাজা দেয়া হয়েছে। এজন্য দুইজন শিক্ষার্থী আজীবন জন্য বহিস্কার, দুইজন দুই বছরের জন্য বহিস্কার ও দশ হাজার টাকা জরিমানা, একজনকে একবছরের জন্য বহিস্কার ও দশ হাজার টাকা জরিমানা, পাঁচজনকে ছয় হাজার টাকা জরিমানা ও সতর্কীকরণ, নয়জনকে তিনহাজার টাকা করে জরিমানা ও সতর্কীকরণ এবং দুইজনকে দুইজনকে শুধু সতর্কীকরণ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘র‌্যাগিংয়ের দায়ে  তাদের যে শাস্তি দেয়া হয়েছে তা আসলে খুবই কম। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া দরকার ছিল এবং রাষ্ট্রীয় আইনে তাদের বিচার করার দরকার ছিল। তাদের অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় শাস্তি দেয়া হয়েছে। শাস্তি গ্রহণ করে ওদের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু সেটা না করে তারা আন্দোলন করা শুরু করেছে। বিশ্বদ্যিালয়ের বাকি ছাত্রদের কষ্ট দিচ্ছে। শুধু তাই নয়; তারা শিক্ষকদের সাথে বেয়াদবিও করেছে। এটা খুবই লজ্জার।’ তার এ বক্তব্যের পরদিনইড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের উপর এ হামলা বলে ধারনা করা হচ্ছে।
তবে এর আগেও তিনি বহুবার প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন। ফলে তিনি পুলিশ প্রহরায় চলাফেরা করতেন।
জাফর ইকবাল বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং তড়িৎ কৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ছুরিকাঘাতে আহত ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল আশঙ্কামুক্ত
Comments (0)
Add Comment