শিবলী সাখাওয়াত ইলাহী:
চট্টগ্রাম মহানগরীর কর্মব্যাস্ত এলাকা জিইসি মোড়। একদিন ইফকো কমপ্লেক্সের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। হঠাৎ করে একটা ছেলে সবার সামনে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়।
কাছেই কিছু ছেলে কথা বলছিল এবং পাশ দিয়ে দুটো মেয়ে একসাথে যাচ্ছিল। সবাই থমকে দাঁড়ালো।
ছেলেটির অবস্থা দেখে আমিও অন্য সবার সাথে এগিয়ে গেলাম। দেখে সবাই বুঝলো সে মৃগী রোগী। মেয়ে গুলোও খুব ব্যস্ত হয়ে গেল তার জন্য।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সে একটু একটু কথা বলতে শুরু করলো। তার গলায় একটা কিছু ঝুলানো ছিল। খেয়াল করলাম সে কথা বলার আগেই সেটা তার নাকের ভিতরে আটকে দিয়ে গন্ধ নিচ্ছিল।
আমি জানতে চাইলাম এখন কেমন লাগছে। সে কিছু খেতে চাইল। আমি দৌঁড়ে তার জন্য খাবার আর পানির বোতল নিয়ে আসলাম।
সে খাবার শেষ করার পর আমি বললাম আপনি ডাক্তার দেখান নি? সে কান্না কান্না ভাব ধরে না সুচক মাথা নাড়ালো। আমি বললাম এ রোগের চিকিৎসা আছে। আপনাকে শুধু নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে।
জানিয়ে দিলাম, ডাক্তার হয়তো আপনাকে Epilim ট্যাবলেট টাই দেবে কারন এটাই সবাই সাজেস্ট করে তবে রোগীর অবস্থা ভেদে মাত্রা বিভিন্ন রকম হয়, কারো প্রতিরাতে ৫০০ মি.গ্রা হলেই চলে। করো কারো ১০০০ মি গ্রাম এমনকি ২০০০ মি.গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। আপনাকে আমি এক পাতা কিনে দিচ্ছি আপনি আপাতত প্রতি রাতে ৫০০ মি.গ্রাম একটা করে খান। তবে ডাক্তারের সাথে দেখা করে অবশ্যই পরামর্শ নেবেন। সে ওষুধ নিতে অস্বীকৃতি জানালো।
আমি বারবার বোঝালাম, আপনি ওষুধ খান, একেবারে ভালো হবেন না হয়তো তবে সমস্যা হবেনা স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারবেন। অবাক হলাম, সে মোটেও রাজি না।
সে জানালো সে চকরিয়া থেকে এসেছে। অর্থাভাবে সে এখন ফিরতে পারছেনা, যদি কেউ তাকে পৌঁছে দিতে সাহায্য করতো। মেয়ে গুলো তারাতারি করে তাদের ব্যাগ থেকে টাকা বের করে প্রায় শ’খানেক টাকা দিয়ে দেয়।
সে সবার কাছে আবেদন করলো চকরিয়া যাবার জন্য কিছু হায়েস গাড়ি ছাড়ে, সেগুলোতে করে যেন তাকে যাবার ব্যবস্থা করে দেয়। অর্থাৎ আরও অনেক টাকা দরকার। পাশের কিছু ছেলে শুরু থেকেই সবকিছু খেয়াল করছে।
মেয়ে গুলো চলে যাবার পর ছেলে গুলো বিরক্তি প্রকাশ করতে লাগলো। বললো ভালোই ধান্ধা করেছ, ধরে একটা মাইর দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি প্রথমে তাদের কথাগুলো অমানবিক ভাবলেও পরে চিন্তা করে দেখলাম, সে এতো তারাতারি কিভাবে তার গলায় ঝুলানো জিনিষটা নিজে নিজে তার নাকের সাথে লাগিয়ে দিল! কিভাবে এতো তারাতারি সে সবার সাথে কথা বললো! আমি এতো করে বোঝালাম ওষুধ খাওয়ার জন্য, কিনে দেবো বললাম তাও নিল না। ছেলে গুলোকে বললাম, দেখলেন ভাই! সে ওষুধ নিতে রাজী না। ততক্ষণে সে চলে গেছে। ছেলে গুলো জানালো তাকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় এভাবে তারা আরও কয়েকবার দেখেছে। তার দরকার টাকা। তাই সে ওষুধ নেবেনা।
অনেক দিন পর আবার তাকে দেখতে পেলাম একটি সুপার স্টোরের সামনে যেখানে অনেক লোক দাঁড়িয়ে আছে তাদের সামনে পড়ে গেলো। আমিও দেখতে গেলাম, দেখি সেই ছেলেটিই।
আমি যাবার আগেই সে আগের মতো তার গলায় ঝুলানো জিনিষটি নাকের সাথে লাগিয়ে দিল। আমি তারাতারি তার ছবি তুলে নিলাম। সবাইকে জিজ্ঞেস করলাম, সে কি চকরিয়া থেকে এসেছে? তারা বললো হ্যাঁ তাইতো বললো, আপনি কিভাবে জানেন? বললাম এর আগেও তাকে আমি দেখেছি, আমি না শুধু, অনেকেই তাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় এভাবে দেখেছে। এটা তার একটা ধান্ধাবাজি। কেউ তাকে টাকা পয়সা দেবেননা। এটা বলার সাথে সাথে সে এক লাফদিয়ে দু হাতে দুটি ইটের টুকরো নিলো আমাকে মারার জন্য। আর গালাগালিও শুরু করলো।
আমি হাসতে থাকলাম, সবাইকে বললাম মৃগী রোগী এতো তারাতারি উঠে দাঁড়াতে পারেনা। সে আমাকে মারার জন্য ছুটে আসছে! সে ক্রমশ আমার দিকে এসে ইট ছুড়ে মারতে চেষ্টা করছে কিন্তু কিছু মানুষ তাকে সরিয়ে দিচ্ছিল। তখন আমি তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেবার ভয় দেখালাম। সে গর্ব করে বলল, পুলিশ তার কিছুই করবেনা। আমি বিরক্ত হয়ে গেলাম। ভাবলাম রাস্তার ওপারে নিয়ে ভালো করে শায়েস্তা করে দেই।
পরে সাধারণ মানুষের অনুরোধে সেখান থেকে চলে আসি। কিন্তু আমি রাস্তা পার হয়ে এসে পেছনে ফিরে তার দিকে তাকিয়ে দেখি সে প্রচন্ড আক্রমাণাত্নক চেহারায় তখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আবারও দাঁড়ালাম। তার পায়চারি দেখে মনে হচ্ছিল আমার দিকে আসবেই। তখন আমি হাতের ইশারায় বললাম- এপাশে আয়। তবে এবার সে আর আসেনি।
এভাবে কত প্রতারক মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করছে। এদের কারনে প্রকৃত অসহায় মানুষদেরও সাধারণ মানুষ আজকাল অবিশ্বাস করছে। ফলে অসহায় মানুষগুলো উপকার বঞ্চিত হচ্ছে।
নোট: চলতি পথে আপনার জীবনে এরকম কোন সত্য ঘটনা ঘটে থাকলে বা আপনার জীবনের এরকম কোন গল্প থাকলে আমাদের লিখুন “চলতি পথের গল্প” শিরোনামে। আর প্রতি মাসে একজন জিতে নিন আকর্ষনীয় পুরস্কার।
আমাদের ইমেইল করুন: editor@purob.com