চীনে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদ বিলুপ্ত করে দিয়ে ‘আজীবন প্রেসিডেন্ট’ বিল পাস করেছে সে দেশের ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি অব চায়না। এর ফলে বর্তমান প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আজীবন প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন। বলা হচ্ছে, তাঁকে আজীবন প্রেসিডেন্ট রাখার জন্যই এই বিলের প্রস্তাব তোলা হয়।
সি চিন পিং ২০১২ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকেই সি চিন পিং দেশটির ইতিহাসে ধারাবাহিকভাবে আত্মপ্রত্যয়ী ও নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ববাদী একটি যুগের সূচনা করেন। একইসাথে তার হাত ধরে চীন এক নতুন জাগরণ দেখতে পেয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। পরাক্রমশালী দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে চীনের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে তিনিই এখন সামনে থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে সফলতার পাশাপাশি ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
চীন ১৯৯০ সাল থেকে দুই মেয়াদ প্রেসিডেন্ট থাকার বিধান আরোপ করে। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে সংবিধান থেকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মেয়াদ–ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব ওঠে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত সি চিন পিংয়ের মেয়াদ ছিল। সি চিন পিং তাঁর রাজনৈতিক ক্ষমতাকে দিনে দিনে আরও দৃঢ় করেছেন। গত বছর অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের চিন্তাকে দলীয় গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি। আধুনিক চীনের রূপকার হিসেবে স্বীকৃত মাও সে তুংয়ের পর সি চিন পিং হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় যার চিন্তা দলীয় গঠনতন্ত্রে মতাদর্শের মর্যাদা পায়। মতাদর্শের মর্যাদা পাওয়ায় মাওয়ের মতবাদ যেমন মাওবাদ হিসেবে বিবেচিত হয়, সি চিন পিং ’র চিন্তাধারাও বিবেচিত হচ্ছে চি-বাদ হিসেবে। এর বিরুদ্ধে যেকোনও চ্যালেঞ্জ এখন থেকে কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধের অবস্থান বলে বিবেচিত হয়।
কংগ্রেসের শুরুতে উপস্থিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিনঘণ্টা ভাষণ দেন সি চিন পিং । ওই ভাষণে প্রথমবারের মতো ‘নতুন যুগের চীনা পদ্ধতির সমাজতন্ত্র’ সংক্রান্ত সি চিন পিং এর চিন্তাধারা’ নামে নিজের মতামত তুলে ধরেছিলেন তিনি। পরে পার্টির এক প্রস্তাবে বলা হয়, ‘কংগ্রেস দ্ব্যর্থহীনভাবে সি চিন পিং এর চিন্তাধারাকে দলীয় গঠনতন্ত্রের মূলনীতি অংশে স্থান দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে’।
মার্চ ১১ রোববার বেইজিংয়ে ত্রয়োদশ চীনা জাতীয় গণকংগ্রেস-এনপিসি’র প্রথম সম্মেলনের তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বড় ধরনের কোনো ধরনের বিরোধিতা ছাড়াই ‘আজীবন প্রেসিডেন্ট’ সম্পর্কিত চীনের সংবিধান সংশোধনের খসড়া ভোটাভুটির মাধ্যমে গৃহীত হয়েছে। অধিবেশনে গণকংগ্রেসের চেয়ারম্যান চাং দে চিয়াংয়ের কার্যবিবরণী পড়ে শোনানো হয়েছে।
কংগ্রেসে কখনো ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির বিপক্ষে ভোট দেওয়া হয় না। কংগ্রেসের মোট ২৯৮০ জন প্রতিনিধির মধ্যে ২৯৪৬ জন অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন, অনুপস্থিত ছিলেন ১৬ জন। অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধির সংখ্যা বিধিবদ্ধ। সভাপতিমণ্ডলীর নির্বাহী চেয়ারম্যান ওয়াং ছেন এবারের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সভাপত্বিত করেন।
অধিবেশনে গোপন ভোটাভুটিতে সপক্ষে পড়ে ২৯৫৮ ভোট, বিপক্ষে মাত্র ২ ভোট ও ২ জন ভোটদানে বিরত থাকেন। ফলে সংবিধান সংশোধনের খসড়া প্রায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
অন্যান্য দেশের পার্লামেন্টের মতো কংগ্রেস হচ্ছে চীনের সবচেয়ে শক্তিশালী আইন প্রণয়নের ক্ষমতাবিশিষ্ট প্রতিষ্ঠান। তবে চীনে কংগ্রেসকে ‘রাবার স্ট্যাম্পিং’ প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখা হয়। এই বিল পাসের মধ্য দিয়ে সেটিই যে প্রমাণিত হলো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে, এভাবে ‘আজীবন প্রেসিডেন্ট’ বিধানের বিরুদ্ধে সমালোচনা উঠছে চীনের বিভিন্ন মহল থেকে।