টাইগারদের সামনে ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়ের হাতছানি। বাংলাদেশ সময় রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে হাইভোল্টেজ ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ। শিরোপা জয়ে দু’দলের সামনেই বড় চ্যালেঞ্জ ।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ভারত হারাতে পারলে ক্রিকেট বিশ্বের নতুন ইতিহাসে জায়গা করে নিবেন লাল-সবুজের জার্সিধারী টাইগাররা। ক্রিকেট বিশ্ব দেখবে আরেকটি ‘নাগিন নাচ’। তবে ব্যাপারটি একেবারে সহজ নয়। সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ।
কেননা, টি-টোয়েন্টিতে এখনো ভারতকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। সাতবারের মুখোমুখি লড়াইয়ে প্রতিবারই সঙ্গী হয়েছে পরাজয় আর হতাশা। কয়েকটি ম্যাচে জয়ের কাছাকাছি গিয়েও আক্ষেপে পুড়তে হয় টাইগারদের। সবশেষ চলমান ট্রাইনেশন টি-২০ সিরিজে দ্বিতীয়বারের দেখাতেও জেগেছিল জয়ের সম্ভাবনা, কিন্তু শেষে ১৭ রানে হারতে হয়।
অন্যদিকে উদ্বোধনী ম্যাচ লঙ্কানদের কাছে হারের পর টানা তিন জয়ে ফাইনালে ওঠে কোহলি-ধোনিবিহীন ভারত। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে দুই ম্যাচেই হারিয়ে শিরোপা নির্ধারণীতে পা রাখে টিম বাংলাদেশ।
প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ে কাছাকাছি অবস্থানে থাকায় ব্যাপক উজ্জীবিত সবাই। আর সে কারণেই ফাইনালেও ভারতকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে আনতে চায় সোনার ছেলেরা। কিন্তু সেটা তাদের জন্য খুব একটা সহজ হবে না জেনেও আশাবাদী। আর সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা
অন্যদিকে বাংলাদেশের কাছে অপরাজিত শক্তি ভারত কিন্তু এই ফাইনাল ম্যাচটাকে খুব সহজভাবে নিচ্ছে না। তারাও টাইগারদের ভয় পাচ্ছেন। এরই মধ্যে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালের ঠিক আগে দিনেশ কার্তিক স্বীকার করলেন বাংলাদেশ দলের বিপক্ষেও এখন জেতা কঠিন। অনেক চাপ থাকে। তাই এখন দেখার বিষয় টাইগাররা ফাইনালের মাঠে কতটা বীরত্ব দেখাতে পারেন।
এর আগে শুক্রবার রাতে শ্বাসরুদ্ধ ম্যাচে মাহমুদুল্লাহর ব্যাটে করে স্বপ্নের ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ। দীর্ঘ দুই বছর আবার একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের কাছে পরাজয়ের ক্ষত এখনো শুকায়নি। এবার ক্ষত শুকানোর মোক্ষম সুযোগ পেয়েছে টাইগাররা। সেই ফাইনাল ম্যাচে অধিনায়ক মাশরাফি এবার কিন্তু ট্রফিটা টাইগারদের হাতেই দেখছেন।
সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা মনে করেন, শিরোপা জয়ের সূবর্ণ সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। তবে সেটা সম্ভবের কিভাবে? সে জন্য বাতলে দিয়েছেন মূলমন্ত্র। পুরো ভারতীয় টিমের চারজনের ওপর থাকতে হবে মূল ফোকাস। তাহলেই হাতে উঠবে স্বপ্নের ট্রফি।
মূলমন্ত্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে মাশরাফি বলেন, হিসাব কষে মাঠে নামলে এবং আবেগ সরিয়ে মাঠের খেলায় মনোযোগী হলে জয় পাওয়া যাবে সহজেই। তার ভাষ্য, আমার কাছে মনে হয়, রোহিত শর্মা এবং শিখর ধাওয়ান- এই দুইটা উইকেট যদি আমরা দ্রুত নিতে পারি তাহলে ম্যাচটা আমাদের হাতে থাকবে। একই সঙ্গে চাহাল ও ওয়াশিংটনকে ঠিকভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে। এই চারজন খেলোয়াড় নিয়ে পরিকল্পনা করলে আমাদের দিকে ম্যাচটা আসতে পারে।
শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয়ের নায়ক মাহমুদুল্লাহকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘চার বলে যখন ১২ লাগবে, তখন রিয়াদ প্রথম চারটা মারল। তখন মনে হয়েছে সম্ভব। তার আগে নো বলটা আমাদের পক্ষে আসতে পারত। তারপর রিয়াদ যেভাবে খেলেছে অসাধারণ। ১৮ বলে ৪৩। প্রথম থেকে এসেই যেভাবে আক্রমণ করেছে, ওটা ছিল দারুণ। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আসলে এরকম একজনকে খেলতে হয়। প্রতিদিন রিয়াদ খেলবে না, কাউকে না কাউকে খেলতে হবে।’
মাশরাফির মতে, নিদাহাস ট্রফির দুই জয় বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টির সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের সেরা দুই জয়। এজন্য পুরো দলকে কৃতিত্ব দিয়েছেন মাশরাফি। পাশাপাশি তামিমের ব্যাটিংকে মার্ক করেছেন আলাদা করে, ‘বাংলাদেশের সেরা দুই টি-টোয়েন্টি যদি হিসাব করা হয়, তাহলে এই নিদহাস ট্রফিতেই দুইটা হবে। মুশফিক যেভাবে আগেরটা জেতাল। শুক্রবার রিয়াদ করল। কোনো অংশে তামিমের অবদান কম না, লিটনেরও অবদান ছিল। শুক্রবার তামিম আউট না হলে আরো আগে জিততে পারতাম। দুই ম্যাচেই তামিমের বিশাল অবদান আছে।’
তবে ফাইনালে খুবই চ্যালেঞ্জে সামনে দাঁড়িয়ে টাইগাররা। ভারতকে কখনো টি-টোয়েন্টিতে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। সাত টি-টোয়েন্টির সাতটিই হেরেছে। নিদাহাস ট্রফির প্রাথমিক পর্বে ভারতের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই হেরেছে বাজেভাবে। এবার তৃতীয় মুখোমুখিতে বাংলাদেশ-ভারত। এবারই শেষ সুযোগ টাইগারদের ঘুরে দাঁড়ানোর। ফাইনালের মঞ্চে ঘুরে দাঁড়াতে পারলে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটও জিততে পারবে বাংলাদেশ। পুরো বাংলাদেশের সমর্থন সাকিব-মাহমুদুল্লাহদের জন্য।
ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রাথমিক পর্বে দুই ম্যাচেই ভারতের কাছে হারে বাংলাদেশ।
দুই দলের প্রথম ম্যাচে আঁটসাঁট বোলিং করেন অফ স্পিনার সুন্দর ও লেগ স্পিনার চাহাল। দ্রুত ফিরেন অধিনায়ক রোহিত। তবে ৫৫ রানের চমৎকার ইনিংস খেলেন ধাওয়ান।
দুই দলের দ্বিতীয় ম্যাচে ৮৯ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন রোহিত। ধাওয়ান করেন ৩৫ রান। অফ স্পিনার সুন্দর ২২ রানে ৩ উইকটে। তার তিনটি উইকেটই ছিল পাওয়ার প্লেতে। যথারীতি আঁটসাঁট বোলিং করেন চাহাল।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের যে কোনো ম্যাচই কঠিন: কার্তিক
একটা সময়ে ভারত-পাকিস্তান মানেই স্নায়ু চাপ। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ের ম্যাচের পরতে পরতে উত্তেজনা বিরাজ করে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে এখনও উত্তেজনা আছে। তবে আগের মতো নেই। উত্তেজনার সেই জায়গাটা অনেকটাই দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশ। এখন ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচেও উত্তেজনা বিরাজ করে। সেটা অকপটে স্বীকার করেছেন ভারতীয় তারকা ক্রিকেটার দিনেশ কার্তিক।
নিদাহাস ট্রফির ফাইনালের ঠিক আগে দিনেশ কার্তিক স্বীকার করলেন বাংলাদেশ দলের বিপক্ষেও এখন জেতা কঠিন। অনেক চাপ থাকে।
কার্তিকের ভাষায়, ‘বাংলাদেশের বিপক্ষে যে কোনো ম্যাচই কঠিন। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ জিতে দেশে ফিরলে আমাদের বলা হবে ওহ তোমরা বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতেছ। কিন্তু হেরে গেলে তখন বলা হবে-তোমরা বাংলাদেশের বিপক্ষে হেরেছ। কী করেছ তোমরা? আমি নিশ্চিত এবারও দেশে ফিরলে এমনই ঘটবে।’
দেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের এই চাপের কারণে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের কোনো বিকল্প ভাবছে না ভারত। এমনটি জানিয়ে ভারতের এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান বলেন, ‘আমরা গত কিছু দিন যেভাবে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেছি। ফাইনালেও আমাদের সেভাবে খেলার চিন্তা আছে। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে আমরা সফল। ফাইনালে জিতে সেই সফলতা ধরে রাখতে চাই আমরা। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে খুব ভালো একটা ম্যাচ হবে।’
অন্যদিকে বাংলাদেশের দেখানো নাগিননৃত্যে নাচছে গোটা বিশ্ব। আজ ফাইনাল। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সে ম্যাচে ১৬ কোটি তো বটেই, বিশ্বও শরিক হোক উদযাপনে। জেগে উঠুক নাগিননৃত্যে। এটাই সবার প্রত্যাশা।