প্রতিনিয়ত ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়রানি বাড়ছে। তুলনামূলকভাবে পুরুষের চেয়ে নারীরা হয়রানির শিকার বেশি হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যক্তিগত বা আর্থিক তার কোনটি রক্ষা পাচ্ছেনা। তথ্য প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার না জানা, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভআব এ আইন সম্পর্কে না জানার কারণে সাইবার অপরাধে হয়রানি হওয়ার ভুক্তভোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
“The use of computer technology to commit crime”- কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধ সংঘটন করাকে বলা হয় সাইবার অপরাধ। উন্নত বিশ্বে সাইবার অপরাধকে রাখা হয়েছে অপরাধের শীর্ষ তালিকায়। তৈরী হয়েছে নতুন নতুন আইন। বাংলাদেশেও সাইবার ক্রাইম বা এ সংক্রান্ত অপরাধ দমনের জন্য আইন তৈরী হয়েছে। তথ্য ও প্রযুক্তি আইন ২০০৬ সাইবার ক্রাইম বিষয়ে নির্দেশ দেয়। এ আইনে ইন্টারনেট অর্থ এমন একটি আন্তর্জাতিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক যার মাধ্যমে কম্পিউটার, সেলুলার ফোন বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক পদ্ধতি ব্যবহারকারীরা বিশ্বব্যাপী একে অপরের সাথে যোগাযোগ ও তথ্যের বিনিময় এবং ওয়েবসাইটে অবস্থিত তথ্য অবলোকন করতে পারে। সাইবার অপরাধ অতিপরিচিত ও ভীতিকর একটি শব্দ। তথ্য চুরি, তথ্য বিকৃতি, প্রতারণা, ব্ল্যাকমেইল, অর্থ চুরি ইত্যাদি তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে করা হলে সেগুলোকে সাধারণ ভাষায় সাইবার অপরাধ বলা হয়।
সাইবার অপরাধ পরিচিত সাইবার টেররিজম বা সাইবার সন্ত্রাস নামে। দুটি পর্যায়ে এ ধরণের অপরাধ্মূলক কর্মকান্ডকে ভাগ করা সম্ভবঃ-
১। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যক্তি বা জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষুন্ন করা। যেমনঃ ভাইরাস আক্রমণ এবং ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রীয় ওয়েবসাইট হ্যাকিং।
২।ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটার, নেটওয়ার্ক অবকাঠামোকে সরাসরি আক্রমণ।
৩।মেলওয়্যার স্পামিং বা জাঙ্ক মেইল; এটি সম্পূর্ণই মেইল ভিত্তিক। ভুয়া আইডি\ ই – মেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করে নাম- ঠিকানা, ক্রেডিট কার্ড নাম্বার নিয়ে মিষ্টি কথায় ভোলাতে চেষ্টা করবে অপরাধী চক্র। ফাঁদে পা দিলেই বিপদ! স্প্যাম ফোল্ডারে এমন মেইল প্রায়ই আসে।
৪।ইমেইল বা ব্লগ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করে হুমকি দেয়া, ব্যক্তির নামে মিথ্যাচার\অপপ্রচার, নারী অবমাননা, যৌন হয়রানি।
৫। ফিশিং- লগইন\অ্যাকসেস তথ্যচুরি, বিশেষত ই-কমার্স, ই-ব্যাংকিং সাইটগুলো ফিশারিদের লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকে।
৬।অর্থ আত্মসাত-ইন্টারনেট থেকে তথ্যচুরি করে ব্যাংকের এক অ্য্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর একটি উদাহারণ।
৭।সাইবার মাদক ব্যবসায়-আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে ফাঁকি দিতে ইদানীং ইন্টারনেট ব্যবহার করে মাদক ব্যবসার প্রবনতা বেড়েছে।
৮।পাইরেসি- সদ্য প্রকাশিত গান ও সিনেমার এমপিথ্রি বা মুভি ফাইল ইন্টারনেটে শেয়ার হয়ে যাচ্ছে।
৯। ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি- ব্লগ ও ওয়েবসাইট থেকে কোন লেখা ও ফটোগ্রাফি সহজেই কপি পেস্ট করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়া।
১০।পর্ণগ্রাফি
১১।ব্যক্তিগত তথ্য –পরিচয়-ছবি চুরি।
১২। হ্যাকিং
১৩।ক্র্যাকিং- গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা ক্রেডিট কার্ড চুরি করা।
সাইবার অপরাধ আইন-
তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর ৫৬ ধারায় বলা হয়েছে,
১) যদি কোন ব্যক্তি জনসাধারণের বা কোন ব্যক্তির ক্ষতি করার উদ্দেশ্য বা ক্ষতি হবে এটি জানা সত্ত্বেও এমন কোন কাজ করেন, যার ফলে কোন কম্পিউটার রিসোর্সের কোন তথ্যবিনাশ, বাতিল বা পরিবর্তিত হয় বা তার মূল্য বা উপযোগিতা হ্রাস পায় বা অন্য কোনোভাবে একে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
২)এমন কোন কম্পিউটার সার্ভার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোন ইলেকট্রিক সিস্টেম অবৈধভাবে প্রবেশ করার মাধ্যমে এর ক্ষতিসাধন করেন যাতে তিনি মালিক বা দখলদার নন, তাহলে তার এই কাজ হবে একটি হ্যাকিং অপরাধ করলে তিনি অনূর্ধ্ব ১০ বছর কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন। এককোটি টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হতে পারেন বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে-
যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসত হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারে বা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরণের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা উস্কানির প্রদান করা হয়, তাহলের তার এই কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে।
সাইবার অপরাধের শাস্তি-
বাংলাদেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬এর ৫৪ ধারা অনুযায়ী,
কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম ইত্যাদির ক্ষতি অনিষ্ট সাধন যেমন ই-মেইল পাঠানো, ভাইরাস ছড়ানো, সিস্টেম অনধিকার প্রবেশ বা সিস্টেমের ক্ষতি করা ইত্যাদি অপরাধ। এর শাস্তি সর্বোচ্চ ১৮ বছর কারাদন্ড এবং সর্বনিম্ন ৭ বছর কারাদন্ড বা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।