চুলের চাই একটু বেশি যত্ন

প্রচন্ড শীতের পর গ্রীষ্ম এলে স্বভাবতইসবার উপরে বিরুপ প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে যারা সবসময় ব্যস্ত থাকেন আর ব্যস্ততার জন্য পার্লারে যাওয়ার সময় পান না। কিন্তু এই সময়ে আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে চুলে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা যায়- যেমনঃ চুল পড়া,খুশকি,স্ক্যাল্পে ঘামাচি ইত্যাদি। তৈলাক্ত হোক বা ড্রাই, এ সময় চুলের সমস্যার ভোগান্তি হয় সবারই। অতিরিক্ত গরমে স্ক্যাল্প ঘামে ভিজে থাকে, এর থেকে সৃষ্টি হয় ঘামাচি,খুশকি ।তাই সময় করে নিয়মিত শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, অয়েল ম্যাসাজ ছাড়াও চুলের চাই একটু বেশি যত্ন। তাই এ সমস্যার থেকে বাঁচার জন্য কিছু ঘরোয়া টিপস শেয়ার করা হলো-

জবা ফুল ও পাতা চুলের জন্য অনেক উপকারী। চুলের রুক্ষতা কমায় ও চুলকে মসৃণ করে তোলে। ৭-৮ টি পাতা ও ৩-৪ টি ফুল গরম পানিতে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর সেই জল থেকে ফুল ও পাতা উঠিয়ে জলটি ফ্রিজে আধা ঘন্টা ঠান্ডা করতে হবে। শ্যাম্পু করার আগে এই জল চুলে দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।
৩-৪ টা স্ট্রবেরি, ১ টেবিল চামচ মধু, ১ টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে নিন। ১৫-২০ মিনিট এই প্যাক চুলে লাগিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ১ কাপ কাঁচা দুধ, ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এই মাস্ক ১৫-২০ মিনিট চুলে লাগিয়ে রাখুন। হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৪-৫ টেবিল আমন্ড দুধ, ১-২ টেবিল চামচ নারকেল তেল, ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে গোটা চুলে লাগিয়ে রাখুন। এক ঘন্টা পর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
শুষ্ক চুলে ২ টি ডিমের কুসুম/তৈলাক্ত চুল হলে ২টা ডিমের কুসুম সাদা অংশ, ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ১ কাপ কাঁচা দুধ, ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এই মাস্ক ১৫-২০ মিনিট চুলে লাগিয়ে রাখুন। হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
টক দইয়ের সঙ্গে একটি পাতি লেবুর রস ও নিম পাতার রস মিশিয়ে মাথায় লাগান। মিনিট ৪০ পরে শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে দুইবার করতে পারেন।
১ টি পাকা অ্যাভাকোডা, ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ও ১\৪ কাপ কাঁচা দুধ মিশিয়ে আধাঘন্টা চুলে লাগিয়ে রাখুন। ঠান্ডা বা মৃদু গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
তিনটি পাকা কলা ও এক টেবিল চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে একটা প্যাক তৈরি করে মাথায় ৫০ মিনিট লাগিয়ে রাখবেন। এরপর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে নিতে হবে। এতে চুলের রুক্ষতা কমে যায় ও চুল চকচকে হয়ে উঠে।
ডিমের সাদা অংশের সাথে অর্ধেক পাতি লেবুর রস, নিম পাতার রস ও আদা রস মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগান। আধা ঘন্টা পর হারবাল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
গাঁদা ফুল চুলের জন্য অনেক উপকারী। একটি বড় বাটিতে কুসুম গরম জলে তাজা গাঁদা ফুল ভিজিয়ে রাখতে হবে। শ্যাম্পু করার পর এই জল দিয়ে চুল ধুলে তৈলাক্ত চুলের ক্ষেত্রে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
১ কাপ আমলকির রস ও ২ চামচ ক্যাস্টর অয়েল নিয়ে চুলের গোড়ায় হালকা করে ম্যাসেজ করতে হবে। ১ ঘন্টা রাখার পর চুল শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

গ্রীষ্মের ভ্যাপসা ভাবের কারণে চুল রুক্ষ হয়ে যায়। এ সময় চুলের আগা ফাটার ঝুঁকি বেশি থাকে। মাথার তালুতে ঘা হওয়া ও চুলের গোড়া নরম হয়ে চুল পড়ে যাওয়ার বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। তাই যারা সকালে গোসল করেন তারা অবশ্যই চুল শুকিয়ে বাইরে বের হবেন আর সবসময় চুল কে ভ্যাপসা গরম থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করবেন। অনেকে ভেজা চুল নিয়ে রাস্তায় বের হওয়ার পর রিকশা, বাস বা পথে চুল খুলে রাখেন। এটা মোটেও ঠিক নয়। কারণ ভেজা চুলে ধুলাবালি বেশি আটকায়। এতে চুল ড্যামেজ হয়, চুলে খুশকি হয় এবং চুল পড়া বেড়ে যায়। ধুলাবালি থেকে রক্ষা করতে চুলে পাতলা ক্যাপ অথবা কাপড় বেধে রাখুন। অফিস, কলেজ, ভার্সিটি অথবা আপনার গন্তব্যে পৌঁছে খুলে ফেলুন।

এছাড়াও ঘরে বসে আপনি নিজেই চুলের যত্নের জন্য কিছু ঘরোয়া প্যাক বানাতে পারেন-

পেঁয়াজের রস, নারকেল তেল, অ্যালোভেরা জেলের মাস্কঃ-

৩ টেবিল চামচ নারকেল তেলের সঙ্গে অর্ধেকটা পেঁয়াজের রস আর ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল মিক্স করে নিন। এবার পুরো মাথার চুলকে ছোট ছোট সেকশনে ভাগ করে নিয়ে পুরো মাথায় আগাগোড়া প্যাক টি লাগিয়ে নিন। তারপর এক ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার লাগিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভাল করে চুল ধুয়ে শুকিয়ে নিন। পেঁয়াজের সালফার, ভিটামিন এবং এন্টি এক্সিডেন্টস খুশকি এবং স্ক্যাল্পের অন্যান্য সমস্যা দূর করে, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা জেল চুলের উপরের প্রোটেকটিভ লেয়ার কে সুরক্ষা দেয়, হেয়ার ব্রোকেজ রোধ করে।

মেথি, নারকেল তেল, টকদইয়ের মাস্কঃ-

৩ টেবিল চামচ নারকেল তেলের সঙ্গে আধা বাটি টক দই আর দুই চামচ মেথি বাটা বা গুড়ো মিক্স করে নিন। এবার পুরো মাথার চুলকে ছোট ছোট সেকশনে ভাগ করে পুরো মাথায় প্যাকটি লাগিয়ে নিন। এক ঘন্টা রেখে তারপর শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার লাগিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভাল করে ধুয়ে চুল শুকিয়ে নিন। মেথিতে আছে লেসিথিন, প্রোটিন, ভিটামিন সি আর পটাশিয়াম যা চুলের গোড়াকে মজবুত করে তোলে এবং চুল পড়া রোধ করে। টক দই এবং নারকেল তেল দুটোই চুলের এবং স্ক্যাল্পের ডিপ কন্ডিশনিং এর পাশাপাশি চুলের কিউটিকলের সুরক্ষা নিশ্চিত করে ফলে চুল হয়ে উঠে প্রাণবন্ত আর ঝলমলে, উজ্জ্বল।

মেয়নিজ এবং ডিমের প্যাকঃ-

১টি ডিমের সাদা অংশ এবং ২ টেবিল চামচ মেয়নেজ মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এর সাথে আপনি ১ টেবিল চামচ টকদই মিশিয়ে নিতে পারেন। ৩০ মিনিট এই প্যাক লাগিয়ে রাখুন। তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। মেয়নেজ এবং ডিম দুটিতেই প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে যা চুলের পুষ্টি দিয়ে থাকে। মেয়নেজ চুলকে নরম, ঝলমলে করে তোলে।

ডিম, বেসন ও অলিভ অয়েলঃ-

এটা আরেকটি রিচ-প্রোটিন হেয়ার প্যাক। এই প্যাক চুল শক্ত ও মজবুত করার সাথে সাথেই প্রাকৃতিকভাবে কন্ডিশনিং করে। একটি ডিম , ১ টেবিল চামচ বেসন ও ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল একসাথে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে আপনার মাথার ত্বকসহ পুরো চুলে লাগিয়ে নিন। এবার এই প্যাক শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন এবং পরে ধুয়ে ফেলুন। অলিভ অয়েল চুলের জন্য কার্যকরী উপাদান। অলিভ অয়েলের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট চুলের সংক্রামক রোগ রোধে কাজ করে। এতে চুলের গোঁড়া থেকে পুষ্টি যোগায় ও চুলের আগা ফাটা রোধ করে এবং চুলের ভঙ্গুরতা কমায়।

এছাড়াও গ্রীষ্ম কালে হেয়ার ড্রায়ার, ফ্লাট আয়রন অথবা কারলিং আয়রন, তাপ প্রতিরোধক স্প্রে বা ক্রিম এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এসব স্প্রে বা ক্রিমের মাঝে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ময়লা ও ঘামের সঙ্গে মিশে চুলের ক্ষতি করতে পারে।
আর যারা চুলে কালার করিয়েছেন তাদের গ্রীষ্মকালে এক্টু সচেতন থাকা উচিত। কারণ কৃত্রিম রং চুলকে তাড়াতাড়ি শুষ্ক করে ফেলে। গ্রীষ্মকালে যখন তাপমাত্রা বেশি থাকে তখন তা চুলকে আরো দ্রুত শুষ্ক ও রুক্ষ করে চুলের ক্ষতি করে। তাই এই সময় চুলের রুক্ষতা ও শুষ্কতা কমানোর জন্য চুলের বিশেষ পরিচর্যা যেমন নিয়মিত তেল লাগানো উচিত।

Complete hair care at homeHair careHare care at homeHome hair careyour hair need more care
Comments (0)
Add Comment