আজকাল বিয়ে নিয়ে অনেক প্রতারণার ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। বর্তমানে বেশিরভাগ তরুণ তরুণী পরিবারের অজান্তে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করে ফেলে। বিয়ের কথা পরিবারে কাউকে জানাতে চায়না তারা। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই ছেলে বা মেয়ে বিয়ের কথা গোপন রেখে অন্য কোথাও পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করে ফেলেন। আবার দেখা যায় প্রেমের সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে ছেলে বা মেয়ে কোন পক্ষ ভুয়া কাবিন নামা তৈরি করে স্বামী বা স্ত্রী হিসেবে দাবি করতে থাকে। এমন ও দেখা গেছে আদৌ বিয়ে হয়নি কিন্তু বিয়ে হয়েছে এমন প্রমাণ দেখিয়ে লিভ টুগেদার করে। মেয়েটিকে আর ভালো না লাগলে অথবা মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়লে ছেলেটি বিয়ের কথা অস্বীকার করতে থাকে। এ ধরণের ঘটনাগুলোকে বিয়ে সংক্রান্ত অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
বিয়ে নিয়ে যদি প্রতারণার বা অন্য কোন ঘটনা ঘটে তাহলে কি এর প্রতিকার পাওয়ার কোন সুযোগ আছে?
হ্যাঁ অবশ্যই আছে। দন্ডবিধি আইনে বিয়ে সংক্রান্ত অপরাধের কঠিন শাস্তির বিধান করা হয়েছে।
যে শাস্তির বিধান আছেঃ-
দন্ডবিধির ৪৯৩ ধারা থেকে ৪৯৬ ধারা পর্যন্ত বিয়ে সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধের শাস্তির বিধান আছে। যার অধিকাংশ অপরাধই জামিন অযোগ্য।
ধারা ৪৯৩ অনুযায়ী, কোনো ব্যাক্তি যদি কোন নারীকে প্রতারণামূলকভাবে আইন সম্মত বিবাহ বলে বিশ্বাস করান কিন্তু আদৌ ওই বিয়ে আইনসম্মত না হয় এবং ওই নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন, কিন্তু আদৌ ওই বিয়ে আইনসম্পন্ন না হয় কিন্তু ওই নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন তবে অপরাধী ১০ বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
৪৯৪ ধারা অনুযায়ী, যদি কোন ব্যক্তি এক স্বামী বা স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও পুনরায় বিয়ে করেন, তাহলে দায়ী ব্যক্তি সাত বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন এবং অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
৪৯৫ ধারায় উল্লেখ্য আছে, যদি কোন ব্যক্তি দ্বিতীয় বা পরবর্তী বিয়ে করার সময় বিয়ের তথ্য গোপন রাখেন, তা যদি দ্বিতীয় বিবাহিত ব্যক্তি জানতে পারেন, তাহলে অপরাধী ১০ বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন এবং অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবেন।
৪৯৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি আইনসম্মত বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা ব্যতীত প্রতারণামূলক বিয়ে সম্পন্ন করেন, তাহলে অপরাধী সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। এ ছাড়া কোনো মুসলমান ব্যক্তি ১ম স্ত্রী থাকলে সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া এবং প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া আরেকটি বিয়ে করেন, তিনি ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যদেশের ৬ (৫) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করবেন। অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হলে ব্যক্তিকে এক বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড বা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দন্ড হতে পারে।
কিভাবে নিবেন আইনের আশ্রয়ঃ-
বিয়েশাদী অপরাধের জন্য অভিযোগ থানা বা আদালতে গিয়ে চাওয়া যাবে। থানায় এজহার হিসেবে মামলা দায়ের করতে হবে। যদি মামলা না নিতে চায় তাহলে সরাসরি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে সরাসরি মামলা দায়ের করতে হবে। এতে কোন সমস্যা নাই। আদালতে মামলা করার সময় যথাযথ প্রমাণসহ অভিযোগের স্পষ্ট বর্ণনা দিতে হবে এবং সাক্ষীদের নাম-ঠিকানাও দিতে হবে। আদালত অভিযোগকারীর জবানবন্দি গ্রহণ করে যেকোন আদেশ দিতে পারেন। অনেক সময় অভিযোগ আমলে না নিয়ে প্রাথমিক তদন্তের জন্য নির্দেশ দিতে পারেন। কেউ যদি স্বামী বা স্ত্রীর পরিচয়ে নিজেদের অন্তরঙ্গ ছবি ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে অথচ আদৌ কোন বিয়ে সম্পন্ন হয়নি তাহলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা করার সুযোগ আছে এবং এ মামলা থানায় করতে হবে। এ ছাড়া ভুয়া কাবিন নামা তৈরী করলে জালিয়াতির অভিযোগ ও আনা যাবে।
যে বিষয়গুলো নিয়ে সতর্ক থাকবেনঃ-
যেভাবেই বিয়ে সম্পন্ন হোক না কেন কাবিননামা কিংবাস বিয়ের সব দলিল নিজের কাছে রাখা উচিত। কাবিননামার উপর কাজির সিল বা স্বাক্ষর আছে কি না যাচাই করে নিতে হবে এবং কোন কাজির মাধ্যমে বিয়েটা সম্পন্ন হলো তার সঙ্গে যোগাযোগ করে নেওয়া ভালো। মুসলিম বিয়ে নিবন্ধতা বাধ্যতামূলক। এটা স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই মনে রাখতে হবে। বর্তমানে হিন্দু বিয়ের নিবন্ধনও ঐচ্ছিক করা হয়েছে। বিয়ের হলফনামা থাকলে তাও সংগ্রহে রাখতে হবে।