চট্টগ্রামের আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর (বড় মাদ্রাসা) মহাপরিচালক বা মুহতামিমের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী। এদিকে, আল্লামা আহমদ শফীর ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
মাদ্রাসার শুরা কমিটি গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠক শেষে জানায়, পরবর্তী মুহতামিম নির্ধারণের দায়িত্ব শুরা কমিটি নির্ধারণ করবে। এর আগে দুদিন ধরে পাঁচ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন মাদ্রাসাটির শিক্ষার্থীরা।
এদিকে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম ভাঙার কারণে মাদ্র্রাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ আদেশ দেওয়া হয়।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শুরা কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফী। সভায় শুরা কমিটির সদস্য মাওলানা মো. সালা উদ্দিন, মাওলানা মো. নোমান ফয়েজী, মো. ওমর ফারুক ও শিক্ষার্থীদের পক্ষে হেফাজতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা মহিবুল্লাহ বাবুনগরীসহ জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় মহাপরিচালকের পদ থেকে আল্লামা শফী সেচ্ছায় পদত্যাগ করলেও শুরা সভার প্রধান হিসেবে তাঁকে মনোনীত করা হয়। বর্তমানে শুরা কমিটি মাদ্রাসা পরিচালনা করবে বলে সভা থেকে জানানো হয়। শুরা কমিটির সদস্যরা মনোনীত করবেন।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসার মাঠে অবস্থান নেন। এ সময় মাদ্রাসার পাগলা ঘণ্টা বাজিয়ে ও মাইকিং করে সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনে যোগ দিতেও বলা হয়। অপরদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসংখ্য সদস্যদের মাদ্রাসার আশপাশে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এ সময় মাদ্রাসার সব জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের কক্ষের দরজাসহ বিভিন্ন সামগ্রী ভাংচুর করেন। মাদ্রাসার সহপরিচালক আল্লামা শেখ আহমদ, আল্লামা আহমদ দীদার কাসেমী, মুফতি জসীমউদ্দিন, মাওলানা ওমর, মাওলনা আনাস মাদানী, মাওলানা নুরুল ইসলাম, মাওলানা ওসমান, মুফতি আবু সাঈদ, মাওলানা আজিজ তকী, মাওলানা ইসহাক, মাওলানা তরীক, মাওলানা বশিরের কক্ষে হামলা চালানো হয়।
আন্দোলনকারীরা মাদ্রাসার সব ফটক বন্ধ করে দেওয়ায় বাইরে থেকে প্রশাসনের কেউ ভেতরে ঢুকতে পারেনি। আবার ভেতর থেকে বাইরে কাউকে আসতে দেওয়া হয়নি। এ সময় প্রশাসনের কাউকে মাদ্রাসার ভেতরে ঢুকে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করতে আন্দোলনরত মাদ্রাসার ছাত্ররা বারবার মাইকিং করছিলেন।
গত বুধবার দুপুর থেকে আল্লামা আহমদ শফীকে হাটহাজারী মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার পরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি ও তাঁর ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচির পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সহকারী সচিব সৈয়দ আসগর আলী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গত ২৪ আগস্ট কওমি মাদ্রাসাসমূহের কিতাব বিভাগের কার্যক্রম শুরু ও পরীক্ষা গ্রহণের জন্য কতিপয় শর্তসাপেক্ষে অনুমতি প্রদান করা হয়। আরোপিত শর্তগুলো যথাযথভাবে প্রতিপালিত না হওয়ায় চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসাটি পুনরায় আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত নির্দেশক্রমে বন্ধ করা হলো।