ডেস্ক নিউজ: চট্টগ্রাম -৯ আসনের সাংসদ এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল শনিবার রাতে শ্যামা পূজা উপলক্ষে বন্দর নগরীর গোল পাহাড় কালী মন্দিরে আায়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি সাম্প্রতিক মৌলবাদী গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই মুষ্টিমেয় মৌলবাদী গোষ্ঠী, আমরা তাদের কাছে মাথা নত করব না। দুয়েকদিন আগে আমরা যা দেখলাম। একটি খুবই ছোট মৌলবাদী দলের একজন নেতা মঞ্চে দাঁড়িয়ে মঞ্চ কাঁপাচ্ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যাপারে তারা কথা বলছিলেন। মঞ্চ কাঁপিয়ে, ভয় ডর সৃষ্টি করে, বড় গলায় যারা কথা বলছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- মঞ্চ বেশি কাঁপাবেন না। মঞ্চ বেশি কাঁপালে পায়ের নিচের মাটিও নরম হয়ে যাবে। আপনাদের হুমকি-ধমকি এগুলো বন্ধ করুন। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রকে শ্রদ্ধা করে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে আপনারা আছেন। হ্যাঁ, মৌলবাদী গোষ্ঠীও গণতান্ত্রিক পরিবেশে মাঝে মাঝে রাজনীতি করার অধিকার রাখে। কিন্তু মৌলবাদী কথা বলা, জনমনে শঙ্কা আনা এবং জাতীয় প্রতিষ্ঠান, জাতির পিতার ব্যাপারে আলোচনা করার ধৃষ্টতা যারা দেখাবে তাদেরকে আমরা বলতে চাই- আপনারা বাড়াবাড়ি বন্ধ করুন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, সরকারের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। এই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঘাড়ে হাত রেখে বন্ধুত্বও করতে জানে, বেশি বাড়াবাড়ি করলে ঘাড় মটকে দিতেও জানে। সুতরাং ঘাড়ে হাত দিয়ে বন্ধুত্ব করেছে বলে, সহনশীল আচরণ দেখিয়েছে বলে মনে করবেন না সেটা দুর্বলতা। দেশে হানাহানি করবে, আইনশৃঙ্খলার পরিবেশ বিনষ্ট করবে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করবে- ঘাড় আমরা মটকে দিব। সুতরাং সাবধান হয়ে যান, সময় থাকতে সাবধান হয়ে যান। মৌলবাদের জায়গা এই বাংলাদেশ নয়।
আইনত রাজনৈতিক দল করেছেন, রাজনৈতিক কথা বলুন। কাউকে কোনো ঠিকাদারি দেওয়া হয়নি দ্বীনে ইসলাম রক্ষার। সেটার দায়িত্ব আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন সবাইকে দিয়েছেন। আপনারা মঞ্চ কাঁপিয়ে জাতির পিতার নামে যে কথা বলেছেন, দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য যে কথা বলছেন তাদের দিকে শেষবারের মত বলতে চাই- সহনশীল আচরণকে, গণতান্ত্রিক আচরণকে দুর্বলতা ভাববেন না। আমাদের শক্তি মাটির অনেক গভীরে। এই বাংলাদেশের সংবিধান আমাদের শক্তিশালী করেছে।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারের অধীনে সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দলের পক্ষ থেকে আমরা সরকারে থাকি বা না থাকি এর প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এই চট্টগ্রামের ইতিহাস অসাম্প্রদায়িক ইতিহাস। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ আমার বাবাসহ সব সময় সব ধর্মের মানুষের পাশে থেকেছি। অতীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মত ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা হয়েছে, আমরা তা প্রতিহত করেছি।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিষয়ে নওফেল বলেন, সংকটের কোনো কারণ নেই। আজকে কিছু ষড়যন্ত্রকারী, মুষ্টিমেয় গোষ্ঠী আমাদের সম্প্রদায়সমূহের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি এবং শঙ্কার পরিবেশ আনার জন্য অনেক কথাবার্তা আমরা শুনেছি কিছু দিন আগে। সবাই শুনেছে, দেশবাসী শুনেছে। এর প্রতিবাদ আমরা করেছি।
কিছু দিন আগে সনাতন ধর্মের নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ তারাও প্রতিবাদ করেছে। এই বাংলাদেশে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া যেমনি আমরা কেউ সহ্য করব না তেমনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার নাম করে মানুষকে হেনস্তা করা, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া করা সহ্য করা হবে না। আদালত আাছে, সরকার আছে। সেই প্রক্রিয়ায় না গিয়ে যারা সামাজিকভাবে নানা গুজব ছড়িয়ে আমাদের সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি এবং শঙ্কার পরিবেশ আনার অপচেষ্টা করছে তাদেরকে আমরা সাবধান হয়ে যেতে বলি।
বাংলার হিন্দু, বাংলার মুসলমান, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিস্টান অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে। এই বাংলাদেশে সনাতন ধর্ম থেকে শুরু করে সবাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নয় শুধু প্রত্যেকে তার ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে উৎসব পালন করবেন। আমরা সকলেই তাতে শ্রদ্ধা জানিয়ে যার যতটুকু অনুশাসন মেনে তাতে অংশগ্রহণ করব। অংশগ্রহণের সাথে উপাসনার কিছু নেই। আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ নেতৃত্বে আছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। যতদিন শেখ হাসিনার হাতে রইবে এই বাংলাদেশ ততদিন শঙ্কার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এই বাংলাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবী হবে, ঈদুল ফিতর হবে, ঈদুল আজহা হবে, দুর্গা পূজা হবে, শ্যামা পূজা হবে, সরস্বতী পূজা হবে। বাঙালির সকল উৎসব হবে। নিঃসঙ্কোচে হবে নির্ভয়ে হবে।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জি।
সভায় সভাপতিত্ব করেন গোল পাহাড় মহাশ্মশান পরিচলানা কমিটির সভাপতি মাইকেল দেশ। বক্তব্য রাখেন স্বামী লহ্মী নারায়ণ কৃপানন্দ পুরী মহারাজ, সাবেক কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন, অধ্যাপক স্বদেশ চক্রবর্তী, কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজল কান্তি দেব প্রমুখ।