শীতের বিদায়ে বসন্ত আসে। এখন তো দেশে শীত নেই তো বসন্ত আসার প্রসঙ্গটা বেমানান হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই যে গ্রামে-গঞ্জে বা শহরে সবখানেই একই অবস্থা। তবুও আমরা গতানুগতিক বসন্ত বরণের আয়োজন করি। এই আয়োজনটা আমার কাছে অর্থহীন মনে হয়। আমরা বলি- “বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।” এইটা আমারা উপলব্ধি করতে পারি না। এই শিরোনামে পড়ালেখা করে আমরা অমানুষের খাতায় নাম লেখাই। আমরা বসন্ত বরণের নামে আকাম করি। অথচ এই ফুলেই বসন্ত নিয়ে আসে, সুভাস ছড়ায়। চারিদিক সাজিয়ে তোলে। আমরা বসন্ত বন্দনা গাই।
“আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে,এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়,সখীর হৃদয় কুসুম-কোমল-কার অনাদরে আজি ঝরে যায়।”
ফুল ফোটে লাভ কি? আমরাই প্রকৃতির জন্য বিষফোঁড়া হয়ে আছি, ফুল নষ্ট করি। পাখি শিকার করি। এই হলো আমাদের প্রকৃতি প্রেম। তো এইটা উপলব্ধির ব্যাপার। দেশে এখন সব ঋতু বৈচিত্র্য ঠিকঠাক নাই। পাল্টে গেছে। ছয় ঋতুর ছায়াও আমরা দেখি না। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা কিছুই রীতিমতো নেই। অসময়ে বৃষ্টি আর খরা হয়। প্রকৃতিকে দূষণ করে বিষাক্ত করে তুলেছি। এর জন্য দ্বায়ী আমরাই। কোথাও নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা নেই। কলকারখানার আবর্জনা আর দূষিত ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় বাংলাদেশ।
তবুও প্রকৃতি থেমে নেই। ঋতু বৈচিত্র্যে পরিবর্তনের ছোয়া লাগে। অতীতের তুলনায় অনেকটা কমে গেছে প্রকৃতি বৈচিত্র্য। এসব আমাদের উপলব্ধিতে ধরা পড়ে না। দয়াময় রহমানের রহস্য আমাদের আয়ত্তের বাইরে। ঝরা পাতার মর্মর শব্দে শীত বিদায় নিতে নিতে আমরা ফুলের সুভাস পাই। প্রকৃতি নতুন করে সাজে। লাল ফুলে রাঙিয়ে আসে বসন্ত। ফোটে শিমুল, পলাশ, আরো নাম না জানা কতো রঙের ফুল। দেখি চোখ-ধাঁধানো নানান ফুলের বাহার।
বসন্তের উন্মাদনায় বাতাসে ভাসে কোকিলের সুর। হলদে পাখির ডাক। মন মাতোয়ারা পাপিয়ার ডাকে। মাতাল হাওয়ায় ভাসে পাখিদের দল। মৌমাছিরা ডানায় তোলে বসন্তের গুঞ্জন। শূন্য বৃক্ষের শাখায় জাগে বসন্তের মুকুল। সবুজ ও সতেজ হয়ে আসে বসন্ত।
ঝরা পাতার দিন শেষে গাছের শাখায় উঁকি দেয় কচি কচি পাতা। প্রকৃতি সাজে নতুনরূপে। নতুন ছন্দে। বসন্ত উঁকি দেয় ফুলে ফুলে রাঙানো হাসিতে। ফুলের সৌরভে আর কুহু কুহু সুরে প্রকৃতিতে লাগে বসন্তের ছোঁয়া।
লেখক-কবি ও প্রাবন্ধিক।