মসজিদ আল-হারাম
বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ৫টি মসজিদ এর শুরুতেই রাখছি পবিত্র মসজিদ আল-হারাম। মক্কা ইসলাম ধর্মের পবিত্র নগরী হিসেবে স্বীকৃত। আর আল হারাম মসজিদ পবিত্র কাবা শরিফ কে ঘিরে এই মক্কা নগরীতেই অবস্থিত। এই মসজিদে মুসল্লিরা নামাজের সময় কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়ায়। হজ্জ ও উমরার জন্যও মসজিদুল হারামে মুসল্লিদের যেতে হয়। মসজিদ সার্বক্ষণিক খোলা থাকে। হজ্জের সময় এখানে উপস্থিত হওয়া মানুষের জমায়েত পৃথিবীর বৃহত্তম মানব সমাবেশের অন্যতম। যা মক্কা নগরীতে এক বিরল সৈন্দর্য সৃষ্টি করে। এছাড়াও জমজম কুয়া আল হারামের মধ্যে অবস্থিত। যা দর্শনে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মুসল্লি ভিড় করে। আল হারাম মসজিদ মুসলিম ইতিহাসে যেমন পবিত্র ও ঐতিহাসিক তেমনি এর সৌন্দর্যও অনন্য।
সুলতান আহমেদ মসজিদ
বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ৫টি মসজিদ এর পরবর্তী স্থানে রাখছি সুলতান আহমেদ মসজিদ। ঐতিহাসিক এই মসজিদটি তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে অবস্থিত। “সমুদ্রের জল রাশি যেন এই মজসিদটিকে সাজিয়েছে” এখানে ডুকলে এমনটাই মনে হয় দর্শনার্থীদের। মসজিদটির ভিতর নীল রঙের টাইলস দিয়ে সাজানো হয়েছে। বাইরে থেকে এই নীল রঙের ঝিলিক দেখে অনেকেই এই মসজিদ কে “ব্লু মস্ক” বা “নীল মসজিদ” বলে থাকে। ১৬০৯ থেকে ১৯১৬ সালের মধ্যে ওসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান আহমেদ বখতি এই মসজিদ নির্মাণ করেন।মসজিদ কমপ্লেক্সে একটি মাদ্রাসা, একটি পান্থনিবাস এবং প্রতিষ্ঠাতার সমাধি অবস্থিত। ইস্তাম্বুলে ভ্রমণরত মুসলিদের অন্যতম পছন্দের স্থান এই ব্লু মসজিদ।
শেখ জায়েদ গ্রান্ড মসজিদ
বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ৫টি মসজিদ এর পরবর্তী স্থানে রাখছি শেখ জায়েদ গ্রান্ড মসজিদ। অপরূপ সৌন্দর্যের এই মসজিদটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত। মসজিদটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সর্ববৃহৎ এবং পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম এবং সুন্দর মসজিদ। ১০৭ মিটার উঁচু চার মিনার বিশিষ্ট মসজিদটি আমিরাতের জনক শেখ জায়েদ বিন আল নাহিয়ানের নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়। মসজিদটির ভেতরে বাইরে চোখ ধাঁধানো মোজাইকে গড়া কারুকাজ দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি সুন্দর এ মসজিদের অত্যাধুনিক ফিটিংসের শৌচাগার ও ওজুখানাগুলো। মসজিদের চতুর্দিকে যেমন রয়েছে মনোরম পরিবেশের সবুজের সমারোহে ঘেরা গাড়ির পার্কিং, তেমনি মসজিদের চতুরদিকের বেজমেন্টেও সুদৃশ্য ও সুবিন্যস্ত আধুনিক গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা।
কুল শরিফ মসজিদ
এই মসজিদটি মূলত ১৬ শতকের শুরুতে নির্মিত হয়েছিল। কুল শরিফ নামে সে সময়ের ধর্মীয় একজন স্কলারের নাম অনুসারে মসজিদের নামকরণ করা হয়। ১৫৫২ সালে কাজানকে রাশিয়ান বাহিনী থেকে রক্ষা করার সময় কুল শরিফ তাঁর অসংখ্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে মারা যান। ধারণা করা হয়, সেই সময় নির্মিত মিনারসংবলিত মসজিদটিতে গম্বুজও ছিল। মসজিদের নকশা ছিল ঐতিহ্যবাহী ভলগা বুলগেরিয়ার আদলে। নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল প্রথম রেনেসাঁ যুগের সামগ্রী। রাশিয়া-কাজান যুদ্ধে মস্কোর গ্র্যান্ড প্রিন্স ইভান দ্য টেরিবলের হাতে ১৫৫২ সালে মসজিদটি ধ্বংস হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে কাজান ক্রেমলিন আবার এটি আধুনিক নকশায় নির্মাণ করে। ২০০৫ সালের ২৪ জুলাই মসজিদটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এখানে একসঙ্গে ছয় হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। এখানে মোজাইকের নানা নকশা, অলংকার, ক্যালিগ্রাফিসহ আধুনিক অনেক দৃশ্য চোখে পড়ে। কুল শরিফ মসজিদের আধুনিক নির্মাণে নানাভাবে সহায়তা করেছিল সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। মসজিদের ছয়টি মিনারের প্রতিটির উচ্চতা ৫৫ মিটার। বলা হয়, এই মসজিদেই সবচেয়ে বেশি মিনার আছে। ২০০০ সালে মসজিদটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। দ্বিতল এই মসজিদের দোতলায় জাদুঘর রয়েছে বলে বর্তমানে ‘ইসলামের জাদুঘর’ হিসেবে পরিচিত কুল শরিফ মসজিদ। প্রচুর পর্যটক এবং দর্শনার্থীর নিয়মিত সমাগম হয় এই মসজিদ প্রাঙ্গণে।
গ্র্যান্ড জামে মসজিদ
বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ৫টি মসজিদ এর সর্বশেষ স্থানে রাখছি গ্রান্ড জামে মসজিদ। এটি পাকিস্তানের লাহোরের বরিহা শহরে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মসজিদ। এই মসজিদে ৭০ হাজারের বেশি মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি পাকিস্তানের তৃতীয় ও বিশ্বের সপ্তম বড় মসজিদ। মসজিদের ভিতরে ২৫ হাজার ও মসজিদ প্রাঙ্গণে আরও ৫০ হাজার মুসল্লি জমায়েত হতে পারেন। বিশাল এই মসজিদ তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর রয়েছে চারটি মিনার।পুরো মসজিদে ব্যবহৃত হয়েছে ৪০ লাখ মুলতানি টাইলস। তুর্কি থেকে আনা হয়েছে চমৎকার কার্পেট; ইরান থেকে ৫০টি ঝাড়বাতি।
এই মসজিদগুলো যে শুধু দেখতেই সুন্দর তা-ই নয়, বরং বহু পুরানো ইতিহাস ও স্থাপত্যশিল্পের নিদর্শন হিসেবেও সমৃদ্ধ। এখানে এরকম কয়েকটি মাত্র মসজিদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি উল্লেখ করা হলেও সারা বিশ্বেই এরকম আরও অনেক দৃষ্টিনন্দন মসজিদ রয়েছে। আমরা ধারাবাহিক মসজিদের ছবি ও বিবরণ জানাবো।