মঙ্গলবার ১৬ মার্চ সন্ধ্যায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের চেম্বারের জুনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছেন। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে অধ্যাপক ডা. চার্লস এর অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন মওদুদ আহমদ। সঙ্গে তার স্ত্রী হাসনা মওদুদ আছেন।
গত ৫ মে বুকে ব্যথা, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যাসহ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মওদুদ রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি হন। উন্নত চিকিৎসার জন্য মওদুদ আহমদকে গত ১ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার চিকিৎসা চলছিল। ফুসফুসে পানি জমার কারণে অবস্থার অবনতি হলে গত ৯ মার্চ তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ১৯৪০ সালের ২৪ মে নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে সম্মান পাস করে ব্রিটেনের লন্ডনের লিংকনস ইন থেকে ল’ ডিগ্রি অর্জন করেন। লন্ডনে পড়াশোনা শেষে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। তিনি ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়েও কর্মরত ছিলেন। তার পিতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও মা বেগম আম্বিয়া খাতুন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মওদুদ আহমদ চতুর্থ।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বিএনপির ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। সাবেক সংসদ সদস্য ও অষ্টম জাতীয় সংসদে তিনি আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ব্যারিস্টার মওদুদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১-এ ইয়াহিয়া খান কর্তৃক আহুত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন।
বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের জীবনে হয়েছে নানান পট-পরিবর্তন। ১৯৮৫ সালের নির্বাচনে মওদুদ আহমদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এক বছর পর ১৯৮৬-তে তাকে আবার উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৮৯ সালে তাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং এরশাদ তাকে উপ-রাষ্ট্রপতি করেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালেও তিনি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পাঁচবার মওদুদ আহমেদ নোয়াখালী-৫ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
দেশের নানান ক্রন্তিকালে ভূমিকা রেখে গেছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। করেছেন রাজনীতির পাশাপাশি সমাজসেবা। কর্মরত ছিলেন দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় সুপ্রিম কোর্টে। রাজনীতিতে ইতিহাস গড়ে চলে গেলেন বরেণ্য ও বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ।